সড়কের জোড়াতালি ধুয়ে গেছে বৃষ্টিতে

0

ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর : ঈদযাত্রার আগে জোড়াতালি দিয়ে ভাঙাচোরা, খানাখন্দময় রাস্তা আপাত: চলনসই করা হলেও বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে এসব। ফলে অবস্থা যে সেই। সঙ্গত কারণেই যানজটের কবলে পড়ছে ঘরমুখো মানুষ। অবশ্য এবারের ঈদে ‘রাস্তা’ যানজটের কারণ হবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আর গতকাল তিনি বলেছেন, টানা ভারী বর্ষণে মহাসড়ক বারবার ঠিক করা হলেও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে দুর্ভোগ কিছুটা হতে পারে। সেজন্য যানজট নিয়ন্ত্রণে মানুষের দুর্ভোগ এড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

মূলত রাস্তার কারণেই যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে ঘরমুখো মানুষকে। বৃষ্টি ছাড়াও নিম্নমানের সংস্কারকাজের কারণে রাস্তায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা রাস্তায় অতিরিক্ত যান চলাচল এবারও দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত রোজার ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকটি হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রতিবছরই বর্ষা এলেই সারা দেশের সড়ক বেহাল হয়ে পড়ে। গত কদিনের বৃষ্টিতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ বিভিন্ন আন্তঃজেলা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঈদ সামনে রেখে ভাঙাচোরা সড়ক-মহাসড়কে জোড়াতালির নানা রকম কসরত চলে। ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের উপকরণ। এ কারণে কিছু সময় গাড়ি চলতেই রাস্তা আবার ভেঙে আগের অবস্থায় ফিরছে। এছাড়া ঈদে একই সঙ্গে অনেক সংখ্যক যাত্রী ও গাড়ি সড়কে চলাচল  করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। এতে দুর্ঘটনা বেশি হয়। এবার কোরবানির ঈদ হওয়ায় একই রাস্তায় যাত্রীবাহী গাড়ির পাশাপাশি পশুবাহী গাড়ির চলাচল করছে। ফলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙাচোরার সৃষ্টি হয়েছে।

সওজের প্রধান প্রকৌশলী এম ফিরোজ ইকবাল বলেন, বর্ষায় অনেক সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো জরুরি মেরামত করা হলেও হঠাৎ বৃষ্টিতে তা ধুয়ে গেছে। তবে সড়কের সংস্কারকাজ বন্ধ নেই। বৃষ্টির পর পরই ইট-সুরকি দিয়ে অন্তত চলাচলের উপযুক্ত রাখা হচ্ছে। বেহাল হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে মেরামতে অপচয়-লুটপাট। এবারও সড়ক-মহাসড়ক মেরামতে তাৎক্ষণিকভাবে ৩৫৪ কোটি টাকা চেয়েছে সওজের বিভাগীয় কার্যালয়গুলো। স্থায়ী মেরামতের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। তবে সওজ থেকে পাঠানো তাৎক্ষণিক চাহিদা ধরে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরে মেরামত খাতে সওজের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা।

কম বরাদ্দ পাওয়ার পরও এর একটা অংশ আবার বেহাত হয়ে যায় প্রেেকৗশলী-ঠিকাদারের যোগসাজশে। দৈনন্দিন মেরামতের একটা বড় অংশ ব্যয় করা হয় তাৎক্ষণিক দরপত্রের মাধ্যমে। সওজের প্রতিটি জেলা পর্যায়ের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়। এদের অনেকেই আবার ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা। এসব ঠিকাদার অর্থবছরের শুরুতে কিছু কাজ করে ফেলে রাখেন। শেষের দিকে এসে তাড়াহুড়ো করলেও তা মানসম্মত হয় না। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই তা ধুয়ে যায়।

টানা বৃষ্টিতে কোন সড়ক ঠিক থাকছে আর কোনটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা দেখে বোঝা যাচ্ছে কাজের মান। যেমন একই সঙ্গে মেরামত করা হলেও আশুলিয়া সড়কে খানাখন্দ দেখা দিয়েছে; কিন্তু টঙ্গীর অংশ ঠিক আছে। এতে ঠিকাদারদের ফাঁকিবাজি চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছে। এসব তদারকিতে মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম রয়েছে। সেখানেও ম্যানেজ করার প্রবণতা কাজ করে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরিদর্শনে যাওয়ার পর তাদের খুশি করার চেষ্টা অব্যাহত থাকে। কিছু কর্মকর্তা তা উপভোগও করেন।

ঢাকায় গাড়ি প্রবেশ ও বের হওয়ার ক্ষেত্রে গাবতলীর যানজট এড়াতে সেতুর নিচে এক কিলোমিটার দীর্ঘ কংক্রিটের ইউলুপ সড়ক ঈদের আগে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি। ওই ইউলুপ সড়ক নির্মাণ হলে ঢাকার সিটি সার্ভিসগুলো সেতুর নিচ দিয়ে ঘুরে আবার শহরে ঢোকার কথা ছিল। একইভাবে বাবুবাজার সড়কের গাড়িও যানজট এড়িয়ে সহজে চলাচলের সুযোগ পেত। এতে গাবতলী সেতু-সংলগ্ন সিগন্যালে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার গাড়িগুলো আটকা থাকত না। বাস্তবে দেখা গেছে, ইট-সুরকি দিয়ে ওই সড়ক জোড়াতালি দেওয়া হয়েছে। এতে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না।

এদিকে টাঙ্গাইল জেলাসহ উত্তরবঙ্গের বেশকিছু জেলার গাড়ি আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়া হয়ে যাতায়াত করে। শিল্প এলাকা হওয়ায় এ মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেশি। মাত্র ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়ক দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ইট-সুরকি দিয়ে সব মিলিয়ে এক কিলোমিটার এলাকা সংস্কারের মাধ্যমে সড়কটিতে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। একটু বৃষ্টিতেই রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। আর বারবার দেওয়া হচ্ছে জোড়াতালি। এছাড়া টঙ্গী, ঘোড়াশাল, পাঁচদোনা হয়ে বেশকিছু গাড়ি সিলেট অঞ্চলে চলাচল করে। টঙ্গী থেকে পাঁচদোনা পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার সড়কের অবস্থাও ভালো নয়। অপ্রশস্ত এ সড়ক জোড়াতালি দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা এবং যাত্রাবাড়ী থেকে চিটাগাং রোডের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ রয়েছে। এছাড়া কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশকিছু অংশজুড়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের ওই স্থানটিতে পিচ উঠে ইট বের হয়ে গেছে। সেখানে যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। এসব যানবাহনের গতি কমে যাওয়ায় কয়েক দিন ধরে যানজট হচ্ছে।

ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাতায়াত বাড়ে। গাড়ির চলাচলও বেড়ে যায়। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনার ৪৪ শতাংশ ঘটে দুই বা ততোধিক যানবাহনের মধ্যে সংঘর্ষজনিত কারণে। এর মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটে প্রায় ১৭ ভাগ। দুর্ঘটনায় আক্রান্ত যানবাহনগুলোর মধ্যে ৩৫ দশমিক ২৮ শতাংশই যাত্রীবাহী বাস। গত রোজার ঈদের আগে ও পরে ১৫ দিনে সারা দেশের দুর্ঘটনার চিত্র পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পেয়েছে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রোজার ঈদের আগের সাত দিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের সাত দিন মোট ১৫ দিনে সারা দেশে ২১০টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে সড়কে ৩১৪ জন নিহত ও ১ হাজার ২১ জন আহত হন।

বাসচালকদের ওভারটেকিং না করার আহ্বান জানিয়ে গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা (চালকরা) সাবধানে গাড়ি চালাবেন। গতবারের মতো এবারও যেন লাশের পাহাড় দেখতে না হয়।

এদিকে রেলপথে যাতায়াত করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। অধিকাংশ ট্রেনে যাত্রাবিলম্ব। নৌপথে চলছে অতিরিক্ত যাত্রী বহন। বৃষ্টির কারণে রোববার অতিরিক্ত যাত্রী কম পরিবহন করা হলেও গতকাল সোমবার যেন তা পুষিয়ে নেওয়া হয়। এভাবেই চলছে সড়ক, রেল ও নৌপথে ঈদযাত্রা। -আমাদের সময়

Share.
মন্তব্য লিখুনঃ

 

',