যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানরা আতঙ্কিত

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ২৩ সেপ্টেম্বর : যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। ভবিষ্যতে যারা দেশটির প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়াই করছেন তাদের মুখ থেকেই মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব ছড়িয়ে পড়ছে। কিছুদিন ধরেই এই বিতর্ক চলে আসছে। এ নিয়ে দেশটিতে বিভক্তিও লক্ষ্য করা গেছে। রিপাবলিকানরা ধর্মীয় কট্টরপন্থা অবলম্বন এবং বিপরীত দিকে অনেক ডেমোক্র্যাট দলের নেতাদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতার মনোভাব দেখা? যায়। ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকেও মুসলমানদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্যের প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির একজন সম্ভাব্য প্রার্থী বেন কারসন বলেছেন, ইসলাম ধর্ম মার্কিন সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমেরিকার টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে কারসন বলেছেন, একজন মুসলিমকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি মানতে রাজি নন। তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে দেশটির মুসলিম গ্রুপগুলো বলছে, এমন বক্তব্য দিয়ে কারসন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন পাবার যোগ্যতা হারিয়েছেন। মাত্র আগের দিনই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে মুসলমান বলার প্রতিবাদ না করায়, রিপাবলিকান মনোনয়ন প্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।

সম্প্রতি টেক্সাসে আহমেদ মোহাম্মেদ নামে এক স্কুল ছাত্রকে (১৪) গ্রেফতার করা হয়। সে স্কুলে একটি ঘড়ি নিয়ে যায়। ওই ঘড়িটিকে বোমা মনে করে শিক্ষিকা তাকে পুলিশে দেন। এরপর নানা সমালোচনার মুখে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পরে আহমেদকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। স্কুলের কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে আহমেদ ওই স্কুল ত্যাগ করেছেন।

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ইসলামিক ইনস্টিটিউট অব ওরেঞ্জ কাউন্টির অ্যানহেইমে একটি মসজিদ আছে, আছে স্কুলও। সেখানে ইতোমধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ গত ১১ সেপ্টেম্বর এক মুসলিম মা এবং মেয়েকে নানাভাবে তিরস্কার করা হয়। তাদের ওপর হামলা করে একদল শ্বেতাঙ্গ। তারা তিরস্কার করে মা-মেয়েকে কাপুরুষ বলে উল্লেখ করেন এবং এরা আমেরিকায় থাকার যোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করে শ্বেতাঙ্গরা। ওইদিন ছিল টুইনটাওয়ারে হামলার ১৪তম বার্ষিকী।

ফিলিস্তিন বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক জুহায়ের শাথ বলেন, এটা খুবই আতঙ্কের এবং সমস্যার। কারণ দেশের সর্বোচ্চ পদে যারা থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে তারাই এসব বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। এরকম আরো অনেক মুসলমানের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রবিবার কারসন মুসলমানদের নিয়ে যে বিরুপ মন্তব্য করেন। তবে পরদিন সোমবার তার বক্তব্যের ব্যাখায় বলেন, আমি এটা বলিনি যে, মুসলমানরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। আমি বলেছি, তাদের নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে আমি সমর্থন দিতে পারি না এবং দেব না।

গতকাল মঙ্গলবার বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইসলাম বিতর্ক’ এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, বেন কারসনের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় টুইট করেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। তিনি তার টু্ইটার বার্তায় লেখেন, একজন মুসলমান কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন? এই প্রশ্ন রেখেই আবার উত্তরে হিলারি বলেন, এক কথায়, হ্যাঁ। এরপর তিনি লেখেন, কোনো সরকারি অফিস কিংবা ট্রাস্টে চাকরি পেতে ধর্মীয় পরীক্ষার রীতি যুক্তরাষ্ট্রে নেই।

কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস এর নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বেন কারসনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা থেকে প্রত্যাহারের আহবান জানান। কারসন আমেরিকাকে নেতৃত্ব দিতে অনুপযুক্ত। কারণ আমেরিকার সংবিধানের সঙ্গে তার বিশ্বাস সাংঘর্ষিক। অ্যানহেইমের ভলিবল খেলোয়াড় রেদোয়ান (১৮) বলেন, তিনি অনলাইনে সবসময়ই মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষমূলক মন্তব্য পড়েন। বেন কারসনের মন্তব্য সম্পর্কে বলেন, আমি ভাবতে পারি না যে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কিভাবে এধরনের মন্তব্য করেন। কারন এটা আমেরিকার নীতি না।

মার্কিন সংবিধানে সরকারি কোনো পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ধর্ম কোনো বৈষম্য সৃষ্টি করবে না বলে নীতি আছে। ২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য লড়াই করেছিলেন মিট রমনি। রিপাবলিকান দল থেকে। কিন্তু তিনি মরমনে বিশ্বাসের জন্য তিনি ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টানদের মধ্যে আতঙ্কিত থাকতেন। ১৯৬০ সালে জন এফ কেনেডি চার্চকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করার প্রচারণা চালিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন প্রথম রোমান ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট। যে মুসলমানদের নিয়ে এত বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে সেই মুসলমানরাও কিন্তু ভোটার। ফলে তাদের ভোটে কেউ লাভবান হবে না কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা দেখার বিষয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এখন প্রার্থীরা দলের মনোনয়ন লাভের লড়াইয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। কেন এ প্রচারণায় ইসলাম বা মুসলমানদের নিয়ে এসব বক্তব্য আসছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াশিংটনে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এক ধরনের ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম ভীতি আছে। সেই ভীতিটা আসলে রক্ষণশীলদের তৈরি করা একটা ভীতি।’ তিনি বলছেন রক্ষণশীলরা ধর্মের ভিত্তিতেই বিভক্তি করার চেষ্টা করে। তারা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান। রিপাবলিকান দলের অত্যন্ত রক্ষণশীলদের একটি অংশ চাচ্ছেন এটাকে ব্যবহার করে রিপাবলিকান দলের মধ্যে তাদের সমর্থন তৈরি করতে। এই দলটির বাইরে এর কোন আবেদন আছে বলে মনে হয় না।’

বেন কারসন বলেছেন ইসলামি মূল্যবোধ মার্কিন সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কি আছে সেদেশের সংবিধানে? এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রিয়াজ বলেন, ‘আর্টিক্যাল ৬-এ বলা হয়েছে ধর্ম কোন ধরনের সরকারি রাষ্ট্রীয় বা জনস্বার্থ পদে অধিষ্ঠিত হবার ক্ষেত্রে বাধা হতে পারেনা। ইসলামী মূল্যবোধের সঙ্গে সংবিধানের বিরোধ কোথায় সেটা বেন কারসন বলেননি। এটা আসলে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা। ইসলাম বিরোধিতাকে জাগিয়ে তোলা বা ব্যবহারের জন্যেই এসব বলা হচ্ছে’।

এক প্রশ্নের জবাবে রিয়াজ বলেন, এখন প্রাথমিক পর্যায়ের নির্বাচন কিন্তু যিনি প্রার্থী হবেন তিনি এ ধরনের কথা বলতে পারবেন কি-না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ বিতর্কটা আসলে রিপাবলিকানদের মধ্যেই রয়েছে। নির্বাচিত হবার ক্ষেত্রে এগুলো কাজে লাগবেনা।

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমান ভোটার কতো ও রাজনীতিতে তাদের প্রভাব কতো জানতে চাইলে তিনি বলেন প্রায় তিন মিলিয়ন মুসলমান রয়েছে। কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে মুসলমানদের প্রভাব রয়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বড় বিষয় যুক্তরাষ্ট্রে সমাজ ব্যবস্থা ও সাম্যের জন্যে এটা ক্ষতিকর। ফলে বেন কারসনের বক্তব্য রিপাবলিকান পার্টির জন্যে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই তিনি মন্তব্য করেন।-ইত্তেফাক

Share.
মন্তব্য লিখুনঃ

 

',