ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর : বেসিক ব্যাংকে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ৬৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অবশেষে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রাজধানীর রমনা, মতিঝিল ও গুলশান থানায় গতকাল সোমবার আলাদা ১৮টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে গুলশান থানায় হয়েছে আটটি এবং রমনা ও মতিঝিল থানায় হয়েছে পাঁচটি করে মামলা। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ১৫৩ জনকে। তাদের মধ্যে অনেকে একাধিক মামলার আসামি। আর বেশির ভাগ মামলায়ই আসামি হিসেবে নাম রয়েছে ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফখরুল ইসলামের।
মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।
বেসিক ব্যাংকে প্রায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গত ৮ সেপ্টেম্বর ৫৬টি মামলা করার অনুমোদন দেয় দুদক। এরই অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ১৮টি মামলা করা হলো। পর্যায়ক্রমে অন্য মামলাগুলোও দায়ের করা হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
আঠারো মামলায় আসামি ১৫৩
সূত্র মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের তিনটি শাখা থেকে দুই বছরে চার হাজার ২৪৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে ঋণ। ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৮০০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। শান্তিনগর শাখা থেকে এক হাজার ৫২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং দিলকুশা শাখা থেকে ৯২৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৬৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৮টি মামলা করা হলো।
দুদক সূত্রে জানা যায়, নির্ভরযোগ্য জামানত ছাড়াই অনেক ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে ওই তিন শাখায় বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই তা পাঠানো হয় দুদকের কাছে। দুদক অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর নির্দেশ দেয়। অনুসন্ধান শেষে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে মামলা করার সুপারিশসহ কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হলে কমিশন মামলা করার অনুমোদন দেয়।
ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শান্তিনগর প্রধান শাখার যাঁরা আসামি : মামলায় আসামির তালিকায় বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শান্তিনগর প্রধান শাখার যেসব কর্মকর্তার নাম আছে তাঁরা হলেন বেসিক ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সাজেদুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কাজী ফখরুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুস সোবহান, মহাব্যবস্থাপক ও ক্রেডিট ইনচার্জ, আবদুস সবুর, সাবেক মহাব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন চৌধুরী, মহাব্যবস্থাপক সরোয়ার হোসেন, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কনক কুমার পুরকায়স্থ, মহাব্যবস্থাপক এ মোনায়েম খান, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. সেলিম, উপমহাব্যবস্থাপক উমর ফারুক, মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক খান, উপমহাব্যবস্থাপক কোরবান আলী, সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার খান ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক পলাশ দাস গুপ্ত।
গুলশান শাখার যাঁরা আসামি : গুলশান থানায় করা মামলায় বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখার যেসব কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন গুলশান শাখার উপমহাব্যবস্থাপক ও শাখা ঋণ কমিটির প্রধান শিপার আহমেদ, উপমহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামান, উপব্যবস্থাপক ও ক্রেডিট ইনচার্জ এস এম জাহিদ হাসান, উপব্যবস্থাপক এন এ তৌফিকুল আলম, উপব্যবস্থাপক মো. রায়হান আলী, উপব্যবস্থাপক মো. ইমরুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক মাফিজুর রহমান তালুকদার, উপব্যবস্থাপক মোহাম্মাদুস সালাম, অফিসার ও বন্ধকি সম্পত্তি মূল্যায়নকারী শরীফ রিয়াজুল হোসেন, অফিসার ও বন্ধকি সম্পত্তি মূল্যায়নকারী মো. আব্দুল মুকিত, ব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম, ক্রেডিট ইনচার্জ মো. মহিবুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক মো. মোমেনুল হক, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. খোশ নেওয়াজ, উপমহাব্যবস্থাপক এস এম ওয়ালীউল্লাহ, সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আশরাফ হোসেন ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক একরামুল বারী।
গ্রাহকদের মধ্যে যাঁরা আসামি : বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখার যেসব গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাঁরা হলেন মেসার্স এস এফ জি শিপিং লাইন লিমিটেডের সৈয়দ গোলাম হোসেন, মেসার্স তানজিনা ফ্যাশনের শাহিন হাসান, আমিরা শিপিংয়ের মো. গিয়াস উদ্দিন মোল্লা, এশিয়ান শিপিং বিডির মো. আকবর হোসেন, মেসার্স সুরমা স্টিল অ্যান্ড স্টিল ট্রেডিং কম্পানির মহিউদ্দিন শেখ, মেসার্স এ আর এস এন্টারপ্রাইজের মো. ছাবির হোসেন, মেসার্স সিলভার কম ট্রেডিংয়ের মো. সাইফুল আজম পলাশ, মেসার্স ফারশি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ফয়জুন্নবী চৌধুরী, মেসার্স আজাদ ট্রেডিংয়ের রায়হান আজাদ, মেসার্স মণিকা ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের মো. মনির হোসেন, এশিয়ান ফুড ট্রেডিং অ্যান্ড কম্পানির মো. আব্দুল বারী খান, মেসার্স বি আলম শিপিং লাইনসের মোহাম্মেদ বশিরুল আলম, মেসার্স ফার্স্ট অ্যান্ড বেস্ট ট্রেডার্স ইম্পেক্টের জাকির হোসেন, লাইফস্টাইল ফ্যাশন মেকারের মিসেস নার্গিস হোসেন, লিটল ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের মো. সাজ্জাদ হোসেন, সিনটেক্সের মো. হাসিবুজ্জামান, ভাসাবী ফ্যাশন লিমিটেডের ইয়াসির আহমেদ খান, তাহমিনা ডেনিম লিমিটেডের ইয়াসির আহমেদ খান, তাহমিনা নিটওয়্যার লিমিটেডের ইয়াসির আহমেদ খান, ইউকে বাংলার আহমেদ তাজউদ্দিন, খাদিজা অ্যান্ড সন্সের মো. শামিম হাসান, ট্রেড হাউসের মো. তাজউদ্দিন মোল্লা ও এস এল ডিজাইনারসের মো. আনসার আলী।
শান্তিনগর শাখার যেসব গ্রাহক আসামি : ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার যেসব গ্রাহককে মামলার আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন ভয়েস এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব ও পরিচালক সৈয়দ রাজিয়া বানু, মেসার্স সৈয়দ ট্রেডার্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুল গনি ও পার্টনার সুলতান আহমেদ, মেসার্স এমারেল্ড স্পেশালাইড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুল গনি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুস শাফি, পরিচালক সৈয়দ এনামুল গণি, পরিচালক সৈয়দ রেজাউল গণি, পরিচালক সৈয়দ মারহাবুল গণি, পরিচালক সৈয়দ হাসান আর আরাফাহ, পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব, মেসার্স এমারেল্ড অটো ব্রিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুল গনি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব, পরিচালক সৈয়দ এনামুল গণি, পরিচালক সুলতান আহমেদ, পরিচালক সৈয়দ রেজাউল গণি, পরিচালক আবদুস শাফি, পরিচালক মো. সারোয়ার জাহান ও পরিচালক মো. শামীম আহমেদ, মেসার্স হাসিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. হাসিবুজ্জামান, আরআই এন্টারপ্রাইজের মো. ফখরুল আলম, মেসার্স বীথি এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটার কামরান শহীদ, মেসার্স ফিয়াজ এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটার ওয়াহিদুর রহমান, নিউ অটো ডিফাইনের প্রোপ্রাইটার আসমা খাতুন, মেসার্স হক ট্রেডিংয়ের প্রোপ্রাইটার জিয়াউল হক, মেসার্স আলী ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামিদুজ্জামান ও চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল আলম, পরিচালক মো. আহাদুজ্জামান বাতেন, এস ও এস ব্রাদার্সের প্রোপ্রাইটার সুবর্ণ দত্ত, মেসার্স প্রোপেল ইন্টারন্যাশনালের প্রোপ্রাইটার মো. শওকত আজিম, মেসার্স ডায়নামিক ট্রেডিংয়ের প্রোপ্রাইটার আবুল কালাম মো. রায়হান, নাহার গার্ডেন (প্রা.) লিমিটেডের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন ও পরিচালক শফিউল আলম, টেলিওয়েজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রোপ্রাইটার মো. শওকত আজিম, রুদ্র স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর আবদুল মোহাইমেন, মেসার্স এলআর ট্রেডিংয়ের প্রোপ্রাইটার মোসা. লুৎফা বেগম, মেসার্স বাশার এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটার আইনুল হক সোহেল, গুঞ্জন এগ্রো এরোমেটিক অটো রাইস মিলের প্রোপ্রাইটার আইনুল হক সোহেল, নিউ ঢাকা সিটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম মল্লিক।
দিলকুশা শাখার যেসব গ্রাহক আসামি : ব্যাংকের দিলকুশা শাখার যেসব গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাঁরা হলেন মেসার্স এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মনোয়ারুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব ও পরিচালক এনামুল হক খান; সৈয়দ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামদুজ্জামান বাবলু ও চেয়ারম্যান সৈয়দা রোজিনা জামান; মেসার্স সৈয়দ কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামদুজ্জামান (বাবলু) ও চেয়ারম্যান সৈয়দা রোজিনা জামান; রিলায়েন্স শিপিংয়ের প্রোপ্রাইটর আসিফ ইকবাল, আরকে ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কুদ্দুস এবং মেসার্স সিমেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাশেদুল হাসান।
ব্যাংকের প্রধান শাখার যেসব গ্রাহক আসামি : বেসিক ব্যাংকের প্রধান শাখার যে গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাঁরা হলেন মেসার্স নীল সাগর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব লেলিন, মেসার্স বর্ষণ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরান শহীদ ও চেয়ারম্যান সামিয়াজ আক্তার; মেসার্স আজবিহা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মারূফ জামান ও চেয়ারম্যান সাহেরা বানু; মেসার্স পারুমা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের প্রোপ্রাইটর মিসেস শাহানা খানম ও আহসান হাবিব লেলিন; মেসার্স এমারেল্ড ড্রেসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এনামুল হক খান, চেয়ারম্যান সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব ও পরিচালক আনোয়ার হোসেন খোকন।