টাঙ্গাইল, ১৮ সেপ্টেম্বর : টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় মা ও ছেলেকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করার ঘটনায় শুক্রবার বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। গুলিবিদ্ধ দুজন নিহত হয়েছেন। গুলি, লাঠিপেটা ও টিয়ারশেলে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। নিহতরা হলেন, কালিহাতীর কুষ্টিয়া গ্রামের ফারুক হোসেন (৩০) ও ঘাটাইল উপজেলার সালেঙ্কা গ্রামের শামীম হোসেন (৩২)।
ওই এলাকার বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত মঙ্গলবার কালিহাতীতে মা ও ছেলেকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি রফিকুল ইসলাম রোমা ও তার ভগ্নিপতি হাফিজুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিকাল ৪টায় প্রতিবাদ মিছিল বের করে। কালিহাতী ও পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লোকজন জড়ো হয়। সেখান থেকে ৫টার দিকে তারা প্রধান মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। তখন মিছিলকারীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মিছিলটি থানার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ আবার বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ প্রথমে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ বাঁধে। বাসস্ট্যান্ডের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। তখন পুলিশ গুলি ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে। এতে অন্তত ৫০ জন মিছিলকারী আহত হয়। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। গুরুতর আহতদের টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বেলায়েত হোসেন বলেন, গুলিবিদ্ধ ফারুককে কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর মারা যান।
টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফ আলী বলেন, চারজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ শামীমকে ঢাকায় পাঠাতে হাসপাতাল থেকে বের করার সময় তিনি মারা যান।
এ ব্যাপারে কালিহাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জেলার গোপালপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জমির উদ্দিনও মোবাইলফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তবে, জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্চয় সরকার একজনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেন। তবে পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে কি না তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে এ ঘটনার পর কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশের এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল উপজেলা হামিদপুরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিকাল থেকেই সকল দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কালিহাতী উপজেলার সাতুটিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল উপজেলার আঠারদানা গ্রামের এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কয়েক মাস আগে ওই যুবকের সঙ্গে রফিকুলের স্ত্রী চলে যান। পরে পারিবারিক বৈঠকের মাধ্যমে স্ত্রীকে রফিকুলের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে রফিকুলের ওই স্ত্রী আবারও ওই যুবকের কাছে চলে যান। পরে গত মঙ্গলবার রফিকুল ওই যুবক ও তার মাকে কালিহাতীর সাতুটিয়ায় ডেকে আনেন। এরপর ওই যুবক ও মাকে বিবস্ত্র করে তাদের ওপর নির্যাতন চালান। এ ঘটনার পর ওই ভুক্তভোগী মা বাদী হয়ে কালিহাতী থানায় মামলা করেন। পুলিশ রফিকুল ও তার ভগ্নিপতি হাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে।