বিনোদন ডেস্ক, ৮ অক্টোবর : সাল ১৯৪৭। পার্টিশন। একটি সীমারেখা, এক তুড়িতে ভাগ করে দিল পাঁচ হাজার বছরের সভ্যতাকে। এটা সৃজিত মুখার্জির ‘রাজকাহিনি’র প্রেক্ষাপট। সৃজিতের নারী চরিত্রগুলো তখনই প্রতিবাদী হয়ে ওঠে, যখন সীমারেখার হাত থেকে রেহাই পায় না তাদের আশ্রয়টিও। অর্ডার আসে, ‘বাড়ি খালি করে দিতে হবে।’ বাড়ির মধ্য দিয়ে হিন্দুস্থান-পাকিস্তানের সীমান্ত যাবে। বাড়িটি বেগম জানের। বেগম জান পতিতাদের সর্দার। এখানে দশ নারী চরিত্র থাকে। তাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধা। এছাড়া শিশুও আছে। তাদের একজন রুবিনা। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। ছবিতে তাকে দেখা যাবে একেবারে ভিন্নরূপে। ধীর, শান্ত অথচ দৃঢ়। পার্টিশনের সময় হাতে অস্ত্র তুলে নেন। তিনি বলেন, ‘এই লড়াইয়ের শেষ না দেখে আমি নড়ব না। এই জয়াকে আগে কখনো দেখেনি কেউ। জয়া বলেন, চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম। অভিনয়, সংগীত, নৃত্যকলা, ভাস্কর্য ও চিত্রকলাসহ এখানে অনেক কিছুর সমন্বয় থাকে। তাই এ মাধ্যমে কাজ করার মজাই আলাদা। তবে আমি কখনো তথাকথিত উদ্ভট ছবির চলতি হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দেব না। সর্বদা মানসম্পন্ন ছবিতে অভিনয় করার চেষ্টা করব।
দুর্গাপূজায় কলকাতায় মুক্তি পাবে ‘রাজকাহিনি’। এতে আরও অভিনয় করেছেন লিলি চক্রবর্তী (কমলা থাম্মা), পার্নো মিত্র (গোলাপ), প্রিয়াংকা সরকার (লতা), সুদীপ্তা চক্রবর্তী (যুথিকা), সোহিনী সরকার (দুলি), সায়নী ঘোষ (কলি), ঋধিমা ঘোষ (ফাতিমা), দিতিপ্রিয়া রায় (বুছকি) ও এনা সাহা (বন্য)। মজার বিষয় হলো, অবনিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজকাহিনি’ উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৪৭ সালের দেশভাগর প্রেক্ষাপটে যে গল্পটা সাজানো হয়েছিল, তা ছিল পুরুষপ্রধান। কিন্তু সৃজিতের ছবিটা নারীপ্রধান। ছেলেদের মধ্যে এতে অভিনয় করেছেন ধৃতিমান ঘোষ, কৌশিক সেন, আবীর চট্টোপাধ্যায়, যীশু সেনগুপ্ত, নাইজেল আকারা, কাঞ্চন মল্লিক, রুদ্রনীল ঘোষ, রজতাভ দত্ত, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী প্রমুখ।
মুক্তির আগেই রাজকাহিনি পেল ভূয়সী প্রশংসা। বলিউডের বর্ষীয়ান পরিচালক মহেশ ভাট ছবিটিকে ভরিয়ে দিলেন প্রশংসায়। টুইটারে ছবি সম্পর্কে মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন মহেশ। তিনি লিখেছেন, রাজকাহিনির গল্প সবাইকে মুগ্ধ করবে। কাহিনির বুননে এমন একটা প্যাশন আছে- যা আপনাকে সমূলে নাড়িয়ে দেবে। এ ছবিতে প্রায় প্রত্যেক অভিনেতা-অভিনত্রীই বেরিয়ে এসেছেন তাদের চেনা ইমেজ ছেড়ে?
‘অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গানটিতে প্রথমবারের মতো ১২ শিল্পী একসঙ্গে কণ্ঠ দিলেন। রাজকাহিনিতে গানটি ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওর শুরুতেই দেখা যায়, ফাঁকা মাঠ আর উঁচু-নিচু পথ এবং কেমন যেন শূন্যতা চারদিকে। ব্যাকগ্রাউন্ডে কবির সুমনের কণ্ঠে ভেসে আসছে, ‘অহরহ তব আহ্বান প্রচারিত, শুনি তব উদার বাণী’। মাঝে মধ্যে চোখের সামনে ভেসে উঠছে কয়েক ইংরেজের মুখ। কখনো বা মরুর পথ ধরে হেঁটে চলেছে আশ্রয়হীনের কাফেলা। পাশ থেকে সেদিকেই বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে আছে আরেকটি দল। সেখানে দুই নারীও রয়েছেন। তাদের একজন জয়া আহসান।
ছবিটিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জয়া জানান, এ ছবিতে আমি যে চরিত্র করেছি, তা আমার চেনা চরিত্র নয়?এটিই আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং ছিল। কেমন ধরনের চরিত্র, তা দর্শক বুঝতে পারবে- যখন ছবিটা দেখবে। এছাড়া কোনো অভিনেত্রীর মধ্যে থেকে সৃজিত যেভাবে অভিনয় বের করে আনতে পারেন, তা দেখে আমি মুগ্ধ। ছবিতে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী ঋতুপর্ণাও অভিনয় করেছেন। আলামকালে তার প্রতি নিজের মুদ্ধতার গল্পও শোনান জয়া। তিনি বলেন, ঋতুপর্ণাকে দেখে মনে হয়, এখনো আমার অনেক কিছুই শেখার বাকি। বাংলাদেশে তার বেশকিছু কাজ দেখেছি। কিন্তু এবার একসঙ্গে কাজ করার সময় আরও মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। অভিনয় করার সময় ঋতুপর্ণা একেবারে ওই চরিত্রটাই হয়ে যান। জয়া বর্তমানে অভিনয় করেছেন ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি-২’ ছবিতে। এছাড়া খুব শিগগিরই শুরু করবেন ‘পারলে ঠেকা’, ‘বিউটি সার্কাস’ ও ‘জলবালিকা’ ছবির শুটিং। তার মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো হলো নূরুল আলম আতিকের ‘ডুবসাঁতার’, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা’, রেদওয়ান রনির ‘চোরাবালি’, অরিন্দম শীলের ‘আবর্ত’ ও সাফিউদ্দিন সাফির ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’ শীর্ষক ছবিগুলো মুক্তি পেয়েছে। প্রতিটি ছবিই দর্শক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে।