স্পোর্টস ডেস্ক, ১৫ সেপ্টেম্বর : পিএসভির বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ দিয়ে মঙ্গলবার দীর্ঘ প্রতিক্ষিত চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ফিরছে ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। অন্যদিকে গত আসরে পরাজিত ফাইনালিস্ট জুভেন্টাস আতিথেয়তা গ্রহণ করবে ম্যানচেস্টার সিটির।
ইউরো ক্লাব ফুটবলের এই শীর্ষ টুর্নামেন্টের গ্রুপের ম্যাচগুলোর সংক্ষিপ্ত প্রিভিউ।
প্যারিস সেন্ট জার্মেইন (ফ্রান্স) বনাম মালমো (সুইডেন) : প্যারিস সেন্ট জার্মেইন (পিএসজি) হচ্ছে ফ্রান্সের একটি প্রভাবশালী ক্লাব। তারা মালমোর বিপক্ষে লড়াই দিয়ে ইউরোপিয় অঙ্গনে নিজেদের সামর্থ্য প্রমানের লড়াইয়ে অবতীর্ন হবে। ১৯৭৯ সালে পার্ক ডি প্রিন্সেসে অনুষ্টিত ইউরো কাপের এই রানার্স আপ দল তাদের তারকা ফুটবলার ইব্রাহিমোভিচকে বিশ্রামে রেখে শুক্রবার মুখোমুখি হয়েছিল বর্দুর। সেখানে তারা ২-২ গোলে ড্র করে খুইয়েছে মুল্যবান পয়েন্ট। তবে নিজ জন্মুভূমির ক্লাবের বিপক্ষে মাঠে দেখা যাবে ইব্রাহিমোভিচকে। যে ক্লাবটির হয়ে ১৯৯৯ সালে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক ঘটেছিল সুইস তারকার। ইউরোপিয় আসরে হোম ভেন্যুতে ৩৩ ম্যাচে পিএসজির অপরাজিত থাকার রেকর্ডটি গত বছর ভেঙ্গে দিয়েছে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা। কাতালানদের কাছে হেরে টানা তৃতীয়বারের মত টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় প্যারিসের দলটির। দ্বিতীয় পর্বের এই গ্রুপ ম্যাচে ফ্রান্সের ক্লাবটি এমন একটি ক্লাবের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে যে ক্লাবটির গত মৌসুমে এই আসরে অভিষেক ঘটেছে।
রিয়াল মাদ্রিদ (স্পেন) বনাম শাখতার দোনেৎস্ক (ইউক্রেন) : টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশ নেয়া শাথতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে সান্টিয়াগো বার্নব্যুতে প্রথমবারের মত মুখোমুখি হতে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদ। যে ম্যাচে নিজেদের রেকর্ড সংখ্যক ১০ম শিরোপার দাবীদার হিসেবে সকলের নজর কাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রিয়াল কোচ রাফায়েল বেনিতেজ। দলীয় সুপার স্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এখন পুরোপুরি ফর্মে রয়েছেন। যার প্রমান তিনি দিয়েছেন গত শনিবার এস্পানিওলের বিপেক্ষ ম্যাচে। তার দেয়া ৫ গোলে ভর করে রিয়াল মাদ্রিদ ৬-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে জয় লাভ করে। পাশাপাশি লা লীগায় সর্বকালের সর্বাধিক গোল দাতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন নিজেকে। এতদিন ওই আসনের মালিক ছিলেন রাউল।
গ্রুপ-বি
পিএসভি আইন্দোভেন (হল্যান্ড) বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড : গত মৌসুমে দুঃখজনকভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ না পাওয়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফের চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলার সুযোগ করে নিয়েছে চলতি মৌসুমে। গ্রীষ্মের দল বদলে তারা মেমফিস ডিপেকে দলে ফিরিয়ে এনে শক্তি বাড়িয়েছে। ২০০০-২০০১ মৌসুমের টুর্নামেন্টেও একই অবস্থায় মুখোমুখি হয়েছির দল দু’টি। এ সময় পিএসভির মাঠে ইউনাইটেড ৩-১ গোলে পরাজিত হলেও ওল্ড ট্রাফোর্ডে একই ব্যবধানে জয়লাভ করে। চলতি আসরে ডাচ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লীগে অংশগ্রহনের সুযোগ পেয়েছে পিএসভি।
দুই দলের কোচই পরস্পরের পূর্ব পরিচিত। পিএসভি কোচ ফিলিপ ককু ফণ গালের অধীনেই বার্সেলোনা এবং ডাচ দলে প্রশিক্ষন নিয়েছেন।
উলফসবার্গ (জার্মানি) বনাম সিএসকেএ (রাশিয়া): ২০০৯ সালে একবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ম্যাচে সিএসকেএ ক্লাবকে আথিথেয়তা দিয়েছিল উলফসবার্গ। ওই সময় রুশ দলটির প্রধান অস্ত্র ছিল প্রতি আক্রমণ। এসময় অবশ্য জয় পেয়েছিল বুন্দোসলীগা রানার্স আপরাই। তবে মস্কোতে গিয়ে ব্যর্থতার কারনে তারা নকআউট পর্বে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
গত মৌসুমে ইউরোপা লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে অংশ নেয়া উলফসবার্গ বুন্দোস লীগায় টানা ২৪টি হোম ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। অপরদিকে সিএসকেএ’র রয়েছে টানা ৭বার লিগ চ্যাম্পিয়ন হবার রেকর্ড।
গ্রুপ-সি
গ্যালাতাসারে (তুরস্ক) বনাম অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ (স্পেন) : তার্কিশ চ্যাম্পিয়ন গ্যালাতাসারে ইউরোপীয় টুর্নামেন্টে তাদের সেরা নৈপুন্যটি প্রদর্শন করেছিল ২০০০ সালে। এসময় টাইব্রেকারে তারা আর্সেনালকে হারিয়ে জিতে নিয়েছিল তৎকালীন উয়েফা কাপ। এই দলটিই আথিথেয়তা দিবে ২০১৪ সালের ফাইনালিস্ট অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের। স্পেনের দলটি ১৯৬২ সালে সুযোগ পেয়েছিল ইউরোপীয় কাপ শিরোপা জয়ের। তবে গত শনিবার ঘরোয়া আসরে তারা পরাজিত হয়েছে বার্সেলোনার কাছে। ডাচ তারকা ওয়েসলি স্নাইডার স্বাগতিক দলের ভারসা হলেও আক্রমনভাগে প্রধান হুমকি হিসেবে রয়েছেন জার্মান স্ট্রাইকার লুকাস পোডলস্কি।
বেনিফকা (পর্তুগাল) বনাম আস্তানা (কাজিকস্তান) : পুর্তগীজ ক্লাব বেনফিকা ইউরোপীয় আসরে গৌরবময় অধ্যায় রচনা করেছিল ১৯৬১ ও ১৯৬২ সালে পরপর ইউরোপীয় কাপের শিরোপা জয় করে। এরপর তারা ২০১৩ ও ২০১৪ সালের ইউরোপা লীগের ফাইনালে হার মানে যথাক্রমে চেলসি ও সেভিয়ার কাছে। এই দলটিই মুখোমুখি হচ্ছে কাজাকিস্তান থেকে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লীগে অংশগ্রহনের সুযোগ পাওয়া আস্তানার। রেকর্ড সংখ্যাক ৩৪টি ঘরোয়া শিরোপা জয় করা বেনিফিকা বর্তমানে কোচ রুই বিটোরিয়ার তত্বাবধানে রয়েছে। গত শুক্রবার নিজেদের মাঠে ঘরোয়া লিগ ম্যাচে ৬-০ গোলে বেলেনেনসেসকে হারিয়ে তারা প্রতিপক্ষ দলকে আগাম হুমকি দিয়ে রেখেছে।
গ্রুপ-ডি
ম্যানচেস্টার সিটি (ইংল্যান্ড) বনাম জুভেন্টাস (ইতালি) : এই ম্যাচটিই হবে ইউরোপীয় ম্যাচগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অনিশ্চয়তার ম্যাচ। কারণ এখানে ফেভারিট তকমা এককভাবে কারো নেই। ঘরোয়া প্রিমিয়ার লিগে উড়ন্ত সুচনা করেছে ম্যানচেস্টার সিটি। ৫ সুচনা ম্যাচের সবকটিতেই জয়লাভ করেছে ক্লাবটি। তবে বিগত চার বছর ধরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি তারা। দুইবার তারা বিদায় হযেছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। আর দুইবার দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌছে হার মেনেছে বার্সেলোনার কাছে।
এদিকে গত আসরের ফাইনালে খেলে সাবইক তাক লাগিয়ে দিয়েছিল জুভেন্টাস। যদিও বার্সেলোনার কাছে ৩-১ গোলে হার মেনেছে ইতালির জায়ান্টরা। তবে চলতি মৌসুমে ঘরোয়া লিগের তিন ম্যাচে তারা এখনো পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখেনি। ফলে ইউরো মঞ্চে তারা লড়াই করবে অনেকটা দুর্বল মানসিকতা নিয়েই।