চির নিদ্রায় সাংবাদিক আওলাদ হোসেন

0

ঢাকা, ২ অক্টোবর  : স্বজন শুভানুধ্যায়ী ও সহকর্মীরা চোখের জলে বিদায় জানালেন বিশিষ্ট বিনোদন সাংবাদিক আওলাদ হোসেনকে। গণমাধ্যম, চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিশিষ্টজন ও সর্বস্তরের শুভানুধ্যায়ীদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সমাহিত করা হয়েছে প্রথিতযশা এ সাংবাদিককে।

পুরান ঢাকার ইসালমপুর জামে মসজিদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, এফডিসি ও চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে চার দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় আওলাদ হোসেনের। শেষ বারের মতো তার লাশ নেয়া হয় প্রিয় কর্মস্থল মানবজমিন কার্যালয়ে। সেখান থেকে নিয়ে বিকালে আজিমপুর কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও এফডিসিতে আওলাদ হোসেনের কফিনে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। এসময় তার স্মৃতিচারণ করে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এফডিসিতে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীসহ সিনিয়র সাংবাদিক ও চলচিত্র অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা। সেখানে চলচিত্রের শিল্পী, কলাকুশলী ও কর্মকর্তারা আওলাদ হোসেনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।

গত রাতে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন মানবজমিনের সিনিয়র রিপোর্টার মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন। (ইন্নালিল্লাহে… রাজিউন)। বৃহস্পতিবার দিনভর চ্যানেল আই’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নেন আওলাদ হোসেন। রাতে এই অনুষ্ঠানের খবর লিখে মানবজমিন অফিস থেকে বাসায় ফিরেন। রাত ১২টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সেখান থেকে দ্রুত ল্যবএইড হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আওলাদ হোসেন স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। তার দুই সন্তানই বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। আওলাদ হোসেনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসেন। তাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান অনেকে। পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানানে ছুটে যান জিগাতলার বাসায়।

বাদ জুমা জন্মস্থান পুরান ঢাকার ইসলামপুর জামে মসজিদে প্রথম এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল এফডিসিতে। সেখানে বাংলাদেশ চলচিত্র শিল্পী সমিতি, চলচিত্র উন্নয়ন করপোরেশন ও সহকর্মীদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেখান থেকে লাশ নেয়া হয় চ্যানেল আই কার্যালয়ে। আওলাদ হোসেন নানাভাবে চ্যানেল আইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখানে জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে লাশ আনা হয় কাওরান বাজারে দৈনিক মানবজমিন কার্যালয়ে। সেখানে তার প্রতি সহকর্মীরা শেষ জানান। বিকাল ৪টার দিকে আজিমপুর গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন ১৯৬৬ সালের ১৯শে আগস্ট ঢাকার ইসলামপুরের নিজ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মৃত মোবারক হোসেন ও মা লুৎফুন্নেসার পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। হাম্মাদিয়া হাইস্কুলের মানবিক বিভাগ থেকে ১৯৮২ সালে এসএসসি, ১৯৮৪ সালে শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি ও জগন্নাথ কলেজ থেকে অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৮৭ সালে অনার্স ও ১৯৯০ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি।

তিনি ১৯৮৭ সালে দৈনিক খবরের ম্যাগাজিন ‘সাপ্তাহিক ছায়াছন্দ’তে সহ-সম্পাদক পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দীর্ঘ ১৫ বছরের কর্মজীবন  ছেড়ে ২০০৪ সাল থেকে দৈনিক মানবজমিন-এ সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কমর্রত ছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক যুগান্তর, সাপ্তাহিক চিত্রবাংলা, সাপ্তাহিক মনোরমা, সাপ্তাহিক বর্তমান দিনকাল, সাপ্তাহিক চিত্রালী, পাক্ষিক প্রিয়জন, পাক্ষিক বিনোদন বিচিত্রা, চ্যানেল আইয়ের পাক্ষিক আনন্দ আলো, পাক্ষিক আনন্দ ভুবন পত্রিকায় নিয়মিত আমন্ত্রিত লেখক হিসেবে চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি বিষয়ক কলাম ও প্রতিবেদন লেখেন।

সাংবাদিক হিসেবে তিনি দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক প্রতিবেদকদের অধিকার আদায় ও চলচ্চিত্রের উন্নয়নে নিজেকে বিভিন্ন আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ২০০২-২০০৩ কার্যবর্ষে ‘ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক’পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ফিল্ম জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

Share.
মন্তব্য লিখুনঃ

 

',