স্পোর্টস ডেস্ক, ১৮ সেপ্টেম্বর : জাতীয় লিগরাজশাহী, খুলনা, বগুড়া, ফতুল্লা—সব জায়গায় একই দুশ্চিন্তা। এই গরমে খেলা! আশ্বিন শুরু হয়ে গেলেও এখনো ভাদ্রের তালপাকা গরমে পুড়ছে দেশ। জাতীয় লিগই বা বাদ থাকবে কেন?
ঈদের আগে একটাই পর্ব হবে। ওয়ালটন ১৭তম জাতীয় লিগের সেই পর্বটা আজ একসঙ্গে শুরু হচ্ছে দেশের চার ভেন্যুতে। প্রথম স্তরের ম্যাচে বগুড়ায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুর খেলবে ঢাকা মহানগর দলের বিপক্ষে। খুলনা ও ঢাকা মুখোমুখি হবে খুলনায়। দ্বিতীয় স্তরের ম্যাচ দুটি হবে রাজশাহী ও ফতুল্লায়। রাজশাহীতে স্বাগতিক রাজশাহীর প্রতিপক্ষ বরিশাল। ফতুল্লায় চট্টগ্রাম-সিলেট ম্যাচ।
‘এ’ দলের হয়ে জাতীয় দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই এখন ভারতে। তারপরও জাতীয় দলের তারকারাই প্রথম পর্বের আকর্ষণ। ২০০৮ সালের পর চার বছর বিরতি দিয়ে ২০১২ সালে জাতীয় লিগে একটি মাত্র ম্যাচ খেলেছিলেন সাকিব আল হাসান। এরপর আবার তিন বছরের বিরতি দিয়ে এবারও খেলবেন একটিই ম্যাচ। খুলনা দলে তাঁর সঙ্গে সর্বশেষ জাতীয় দলের প্রতিনিধি আছেন ইমরুল কায়েস ও মুস্তাফিজুর রহমান। চট্টগ্রামের তামিম ইকবাল গত মৌসুমে কোনো ম্যাচ না খেললেও তার আগের মৌসুমে খেলেছেন একটি। রাজশাহীর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এবং ঢাকা মহানগর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও তাঁদের সর্বশেষ দুটি ম্যাচ খেলেছেন ওই মৌসুমে।
সাকিবের উপস্থিতি দলের অন্য ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করবে বলে বিশ্বাস খুলনার অধিনায়ক আবদুর রাজ্জাকের, ‘আমি চাই সাকিব বল-ব্যাট দুটো হাতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখুক। ওকে নিয়ে প্রথম ম্যাচটা যেন আমরা পুরো পয়েন্ট নিয়ে জিততে পারি। সাকিবের উপস্থিতি দলের সবার জন্য প্রেরণার উৎস হবে।’ অধিনায়কের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিজ্ঞা সাকিবের কণ্ঠেও। জাতীয় লিগ খেলতে কাল রাতে খুলনায় পৌঁছে মুঠোফোনে বললেন, ‘চেষ্টা থাকবে দলের জন্য ভালো কিছু করতে।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর বিদেশি ঘরোয়া লিগে খেলতে অভ্যস্ত হলেও অনেক দিন পর জাতীয় লিগে ফিরে রোমাঞ্চিত বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, ‘এখানে এসে সবার সাথে আছি…খুবই ভালো লাগছে।’
.প্রতিপক্ষ শিবিরে সাকিবকে দেখে অবশ্য ভয় পাচ্ছেন না ঢাকা বিভাগের অধিনায়ক মোহাম্মদ শরীফ, ‘যে-ই খেলুক না কেন, আমরা তার নাম দেখব না। পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের মাথায় ভালো খেলার চিন্তাটাই থাকবে।’ তবে একটা জায়গায় রাজ্জাকের সঙ্গে তিনিও একমত, ‘সাকিবের সঙ্গে খেলাটা খুলনা এবং আমাদের দলের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য প্রেরণার উৎস হবে। এটা হবে তাদের জন্য বিশাল এক অভিজ্ঞতা।’
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে লিগে একটাই ম্যাচ খেলবেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এটাকে তাই প্রস্তুতির ভালো সুযোগ মনে করছেন মাহমুদউল্লাহ। ঢাকা মহানগর অধিনায়ক হিসেবে আছে জয়ের চিন্তাও, ‘রংপুর ভালো দল। তবে আমাদের লক্ষ্য জয় দিয়ে শুরু করা।’ একই লক্ষ্য রংপুর অধিনায়ক সাজিদুল ইসলামেরও, ‘জাতীয় লিগে প্রতিটা পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করব প্রথম ম্যাচে যেন পুরো পয়েন্ট নিয়ে জিততে পারি।’ বোলিং-ব্যাটিং দুটোই করতে পারেন এমন পাঁচজন খেলোয়াড় রংপুরে। সাজিদের বড় শক্তি এই অলরাউন্ডাররাই।
দ্বিতীয় স্তরে চার দলের অধিনায়কেরই এক লক্ষ্য—শীর্ষে থেকে শেষ করা। আগামীবার খেলতে হবে প্রথম স্তরে। জাতীয় লিগকে দ্বিস্তরবিশিষ্ট করার মূল উদ্দেশ্য খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মানসিকতা আনা। সিলেট অধিনায়ক অলক কাপালির কথা শুনে মনে হলো, সে উদ্দেশ্য পূরণ হতে চলেছে, ‘আমরা লিগটাকে খুব সিরিয়াসলি নিচ্ছে। কীভাবে প্রথম স্তরে ওঠা যাবে, সবার মধ্যে সেই চিন্তা। সবাই চ্যাম্পিয়ন হতে চায়।’ বিকল্প দেখছেন না চট্টগ্রাম অধিনায়ক নাফিস ইকবালও, ‘প্রথম স্তরে যাওয়ার লক্ষ্য আমাদের। সে জন্য প্রথম ম্যাচ থেকেই এগিয়ে থাকতে চাই।’
নিয়মিত অধিনায়ক কামরুল ইসলাম ‘এ’ দলে ডাক পাওয়ায় বরিশালের নেতৃত্ব এখন সহ-অধিনায়ক ফজলে রাব্বির ওপর। যেকোনোভাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য তাঁর। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক মুশফিকও চান প্রথম ম্যাচ থেকেই সুদিনে ফিরতে থাকুক রাজশাহী দল, পা দিক প্রথম স্তরে যাওয়ার সিঁড়িতে। তবে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তাঁর লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে জাতীয় লিগের সীমানাকে, ‘অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে জাতীয় দলের সবার জন্যই এটা প্রস্তুতির ভালো সুযোগ। আমি চাই ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলুক। লম্বা সময় মাঠে থেকে টেস্টের ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিক সবাই।’
জাতীয় লিগে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের এক ম্যাচের অংশগ্রহণটা তাহলেই সার্থক হয়।