স্পোর্টস ডেস্ক, ৮ অক্টোবর : ক্রিকেটের অসময়ে যেন বন্ধুর মতোই হাত বাড়াল জিম্বাবুয়ে। নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া যখন বাংলাদেশ সফর বাতিল করল ঠিক তখনই বাংলাদেশের একটি প্রস্তাবে রাজি হলো তারা। নভেম্বরে দুটি টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে আসছে মাসাকাদজারা। বাংলাদেশে ক্রিকেট যে এখনও নিরাপদ সেটা প্রবলভাবে বিশ্বাস করে বলেই জানুয়ারির সূচি এগিয়ে নভেম্বরে আসছে আফ্রিকার এই দেশটি। গতকালের এই সুখবরে কিছুটা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা নারী দল সফর বাতিল করায় কিছুটা যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছিল, ক্ষোভ মিশেছিল মনে সেটাই যেন দূর হলো কাল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের একটি ঘোষণায়। ‘জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা নভেম্বরে আসতে রাজি হয়েছে।’ গতকাল বিসিবির দ্বাদশ বোর্ড সভা শেষে বাংলাদেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিসিবির সভাপতি। এর আগে জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল আগামী বছরের জানুয়ারিতে।
জিম্বাবুয়ে নভেম্বরে আসতে রাজি হওয়ায় কয়েকদিন পিছিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ানোর কথা ২০ নভেম্বর থেকে। তবে, বোর্ড সভায় বিপিএলের সকল কার্যক্রম অনুমোদিত হলেও, আদৌ নির্ধারিত দিন থেকে টুর্নামেন্টটি মাঠে গড়াবে কি-না সে বিষয়ে এদিন সংবাদ সম্মেলনে কিছু জানানো হয়নি। আইসিসি সভায় গিয়ে ক্রিকেট জিম্বাবুয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিসিবি সভাপতি আসন্ন সফরের সূচি ঠিক করবেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের সূচি নির্ধারিত হয়ে গেলেই বিপিএলের চূড়ান্ত দিনক্ষণ পুনর্নির্ধারিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে ২২ নভেম্বর উদ্বোধন ও ২৪ নভেম্বর খেলা মাঠে গড়ানোর কথা জানানো হলেও, তা এগিয়ে ১৯ নভেম্বর উদ্বোধন ও ২০ নভেম্বর ম্যাচ শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়।
জিম্বাবুয়ে মূলত দুই পর্বে এবার বাংলাদেশ সফর করবে। আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম অনুযায়ী, আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে তিনটি টেস্ট, পাঁচটি ওয়ানডে ও তিনটি টি২০ ম্যাচ খেলতে আসার কথা থাকলেও আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে ভারতে টি২০ বিশ্বকাপ থাকায় জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পরামর্শে একটি টেস্ট কমিয়ে এনে ওয়ানডে-টি২০ ম্যাচগুলোর ক্ষেত্রে অধিক মনোযোগ দেয় বিসিবি। সেই দুটি টেস্ট খেলতেই আগামী মাসে বাংলাদেশ আসছে জিম্বাবুয়ে। অস্ট্রেলিয়া না আসায় জিম্বাবুয়েকে এ সময়ে বাংলাদেশে এসে দুটি টেস্ট খেলে যাওয়ার অনুরোধ জানায় বিসিবি। বিসিবির অনুরোধে সাড়া দিয়েই টেস্ট সিরিজ খেলতে আসছে তারা। বিসিবি সভাপতি সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘জিম্বাবুয়ে আসতে রাজি হয়েছে। তবে সূচি এখনও হয়নি। আইসিসি বৈঠকে গিয়ে সরাসরি সাক্ষাতে সময়সূচি ঠিক হবে।’ আগামীকাল দুবাইতে শুরু হচ্ছে আইসিসির বোর্ড সভা। আজই বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সভায় যোগ দিতে দেশ ছাড়বেন।
অস্ট্রেলিয়ার শক্তির সঙ্গে জিম্বাবুয়ের শক্তির হয়তো তুলনা চলে না কিংবা অস্ট্রেলিয়া এলে সফর ঘিরে যে জৌলুস তৈরি হতো জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রে হয়তো সেটা হবে না। তবুও এমন পরিস্থিতিতে জিম্বাবুয়ের এই আগমনকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণই বলতে হবে। জিম্বাবুয়ে এলে আন্তর্জাতিক দলগুলোর বাংলাদেশকে নিয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত শঙ্কা অত্যন্ত দূর হয়ে যাবে। এই জিম্বাবুয়েই গত মে মাসে নিরাপত্তা ইস্যুতে জর্জরিত পাকিস্তানে ২০০৯ সালের পর প্রথম আন্তর্জাতিক দল হিসেবে সফর করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আগেভাগে আসতে রাজি হয়ে জিম্বাবুয়ে সেই মিত্রতার হাতটিই বাড়িয়ে দিল!