ঢাকা, ১ অক্টোবর : একাত্তরে আলবদর বাহিনীর অন্যতম নেতা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছে।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের লাইব্রেরিয়ান তাপস চন্দ্র রায় ও মো. সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি দল লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানা জারি কারাগারে নিয়ে যান।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক এবং অন্য দুই বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী সাকা-মুজাহিদের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন। এরপরই লাল সালুতে মোড়া এই মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রীয় কারাগারে। এ মৃত্যু পরোয়ানা সাকা এবং মুজাহিদকে পড়ে শোনানো হবে।
বুধবার দুপুরে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর সন্ধ্যায় রায়ের কপি যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেন সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।
প্রচলিত রীতি অনুযায়ী এখন আসামিপক্ষ আপিল বিভাগের রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন করবেন। আর এ আবেদনের জন্য তারা ১৫ দিনের সময় পাবেন। ১৫ দিনের মধ্যে আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন করলে আপিল বিভাগ তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করবেন। রিভিউ নিষ্পত্তির পর যে রায় বহাল থাকে তা কার্যকর হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুন মুজাহিদ এবং ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীর আপিল খারিজ করে সংক্ষিপ্ত রায় দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হচ্ছেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। চার বিচারপতির স্বাক্ষরের পর বুধবার মুজাহিদের ১৯১ পৃষ্ঠার এবং সাকা চৌধুরীর ২১৭ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদের মামলার রায় দেন। ওই রায়ে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হয়েছিল। এর মধ্যে ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগে তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে হত্যার অভিযোগটি বুদ্ধিজীবী হত্যার মধ্যে পড়ে যাওয়ায় ট্রাইবু্যুনাল এ বিষয়ে আলাদা কোনো সাজা দেননি। সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হত্যার বিষয়টি মামলায় এক নম্বর অভিযোগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা ছিল।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ পৃথক চারটি (৩, ৫, ৬ ও ৮নং) অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দিয়ে রায় দেন। এছাড়া তিনটি (২, ৪ ও ৭নং) অভিযোগে তাকে দেয়া হয় ২০ বছর করে কারাদণ্ড। দুটি (১৭ ও ১৮নং) অভিযোগে দেয়া হয় ৫ বছর করে কারাদণ্ড।
সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ দুজনেই কারাগারে রয়েছেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধকালে আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। আর মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একই বছরের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। তাঁরা দুজনেই ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছিলেন।