ডেস্ক : আদ্যিকাল থেকে মানব মনের সহজাত বাসনা হলো টিকে থাকার বাসনা, ভালোভাবে, সুস্থভাবে বহুদিন বেঁচে থাকার বাসনা। সময়ের সাথে সাথে মানুষ জয় করেছে বহু দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি। আরো ভালোভাবে বেঁচে থাকার মধ্যদিয়ে মানুষের মনে নতুন এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা স্থান করে নেয়; যার নাম অমরত্ব।
মানুষ চায় চিরকাল সুস্থ থাকতে, জরা, ব্যাধি, বার্ধক্যমুক্ত থাকতে। কিন্তু বয়সের ভারে তা সম্ভব হয় না। সময়ের সাথে দেহও ক্ষয় হতে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে আসে। কোষগুলো হয়ে পড়ে দুর্বল। অবশেষে গ্রাস করে মৃত্যু। তাই এমন কিছু প্রয়োজন, যা এই ক্ষয়কে থামিয়ে দেবে। মানুষ হয়ে উঠবে অমর।
ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে আসছে। সে আশায় তন্ত্র-মন্ত্র থেকে শুরু করে ভেষজ ওষুধ– কোনো চেষ্টাই বাদ যায়নি। বিজ্ঞানীরাও যুগ যুগ ধরে মানুষের অমরত্বের উপায় বের করার জন্য গবেষণা করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি এমনই এক গবেষণায় এসে ঠেকে গেছেন বিজ্ঞানীরা। সমুদ্রগর্ভে পাওয়া সাধারণ এক প্রাণীর দেহে মানবজাতির অমরত্বের বীজ লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করছেন তারা।
‘সি অ্যানেমনি’ নামের ওই প্রাণী সমুদ্রতটের কাছেই পানির নিচে পাওয়া যায়। উজ্জ্বল রঙের ফুলের মতো দেখা গেলেও উদ্ভিদ নয় সেগুলো। প্রাণীটি নিয়ে এ পর্যন্ত পরিচালিত গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর আদি পূর্বপুরুষের সঙ্গে মানবজাতির আদি পূর্বপুরুষের কোনো না কোনো জায়গায় কোনো না কোনো যোগসূত্র রয়েছে।
একটা সময় পর্যন্ত সি অ্যানেমনিকে উদ্ভিদ মনে করা হতো। পরে আবিষ্কার হয় সি অ্যানেমনি নরম দেহবিশিষ্ট এক ধরণের প্রাণী। এরা অগভীর পানিতে পাথর এবং প্রবাল প্রাচীরের গায়ে লেগে বেড়ে ওঠে। এদের কর্ষিকায় থাকে এক ধরনের বিষ। চিংড়ি আর ছোট মাছের মতো শিকার কর্ষিকা দিয়ে জড়িয়ে ধরে দেহে বিষ ঢেলে দেয়, যা শিকারের দেহকে অসাড় করে ফেলে।
পৃথিবীর জলভাগজুড়ে সি অ্যানেমনির ১ হাজারেরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। আকারে কয়েক সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে ১ মিটারের বেশি বড় হয় প্রাণীগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি শহরে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার জিনতত্ত্বের অধ্যাপক ড্যান রখসার বলেন, ‘আমরা যতদূর জানি, সি অ্যানেমনিকে ‘অমর’ বলা যায়। বহুদিন বাঁচে এরা। এদের মধ্যে ১টাকে পর্যবেক্ষণ করে তার বয়স ১শ’ বছর বলে রেকর্ড করা হয়েছিল।’
অ্যানেমনির বার্ধক্য বলে কিছু নেই জানিয়ে রখসার বলেন, ‘মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এরা একই রকম সতেজ থাকে। শুধু আকারে বাড়তে থাকে।’
এই প্রাণীর দেহের যেকোনো অংশ কেটে ফেললে সেখান থেকে নতুন অংশ পুনরুৎপাদিত হয়। কর্ষিকা কেটে ফেললে সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসে নতুন কর্ষিকা। এমনকি মাথা কেটে ফেললেও নতুন করে মাথা তৈরি হয়! তবুও মরে না অ্যানেমনি। যদি বিষ প্রয়োগ না করা হয়, বা খেয়ে না ফেলা হয়, এদের জীবন চলতেই থাকে।
মানুষকে বার্ধক্য বা রোগ-ব্যাধি বিষয়ক যেসব ভয়াবহ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যেতে হয়, অ্যানেমনিকে সেসব সইতে হয় না। এদের দেহে টিউমার হলেও তা ক্যানসারে রূপ নেয়ার আগেই সেরে যায়। বয়সের সঙ্গে অ্যানেমনি বার্ধক্যে জড়ায় না; এরা চিরযৌবনের অধিকারী। কোনো কোষ দুর্বল হলে বা মারা গেলে সেই জায়গায় দ্রুত নতুন কোষ তৈরি হয়ে যায়। তাই এরা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একই রকম কর্মক্ষম থাকে।
সি অ্যানেমনির এই ‘অমরত্বে’র রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো জিন বা শারীরবৃত্তিক প্রক্রিয়া আবিষ্কার করা সম্ভব হলে তা মানবদেহেও ব্যবহারের জন্য গবেষণা শুরু হবে বলে জানান অধ্যাপক রখসার।
কেননা সি অ্যানেমনি স্নায়ুতন্ত্রযুক্ত পৃথিবীর সরলতম গঠনের প্রাণী। এর স্নায়ুতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্রসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মানবদেহের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম মিল রয়েছে; যা সম্পূর্ণ ভিন্ন এই দুই প্রজাতিকে প্রায় ৭শ’ মিলিয়ন বছর আগের পূর্বপুরুষের মাধ্যমে যুক্ত করে। -চ্যানেল আই