ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর : অবশেষে লন্ডন সফর চূড়ান্ত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চোখ ও পায়ের চিকিৎসার জন্য আগামীকাল ভোরে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে লন্ডনে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছবেন তিনি। এর আগে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায় তিনি লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে মা বেগম জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাবেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। লন্ডনে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এ প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে রোববার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপস্থিতিতে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বেগম জিয়া মঙ্গলবার রাতে লন্ডন সফরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আগেই খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে যেতে পারেননি। আমরা তাকে অনুরোধ করেছি তিনি যেন তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করেন।
বিমানবন্দর থেকে বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনের অভিজাত এলাকা গ্রিন পার্কের রিডস হোটেল অথবা ক্যানারি ওয়ার্ফের হোটেল রেডিসনে উঠবেন। দুটি হোটেলেই পৃথক দুটি বুকিংসহ তার অন্যান্য সফরসূচির কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। হোটেলে তার সঙ্গে বড় ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও নাতনি জাইমা রহমান থাকবেন। এছাড়া প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই কন্যার মালয়েশিয়া থেকে লন্ডন আসার কথা রয়েছে। লন্ডনে এলে তারাও বেগম জিয়ার সঙ্গে হোটেলে অবস্থান করবেন।
বেগম খালেদা জিয়া এর আগে গত ১৫ই আগস্ট সকাল ৭টায় এমিরেটস এয়ারলাইনের ইকে-৭ ফ্লাইটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা ছিল। কিন্তু লন্ডনে ডাক্তারের অ্যাপয়নমেন্ট চূড়ান্ত না হওয়ায় তিনি সে যাত্রা সাময়িক স্থগিত করেন। তবে এবার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান বেগম জিয়ার জন্য ডাক্তারের অ্যাপয়নমেন্ট চূড়ান্ত করেছেন বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। লন্ডনে চোখ ও পায়ের চিকিৎসার পাশাপাশি পারিবারিক সান্নিধ্যে সময় কাটাবেন খালেদা জিয়া। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রেক্ষাপট, দল পুনর্গঠন, পরবর্তী করণীয় ও নির্বাচন নিয়ে একান্তে কথা বলবেন দলের দুই শীর্ষ নেতা। চূড়ান্ত করবেন আগাম নির্বাচনের পরিকল্পনা ও তা সফলের ছক। আগামী ২৪শে সেপ্টেম্বর লন্ডনে ঈদুল আজহা পালন শেষে দেশে ফেরার কথা রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার।
দলের কোন নেতা বিএনপি চেয়ারপারসনের সফরসঙ্গীর তালিকায় না থাকলেও অনেক নেতা এরই মধ্যে লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সচিব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সেক্রেটারি মুশফিক ফজল আনসারী। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন, সাদেক হোসেন খোকাসহ দলের কয়েকজন নেতা। বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন পৌঁছলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নেতৃবৃন্দ লন্ডনে আসবেন। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বেগম জিয়া লন্ডন সফরের সময় তারেক রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে বৈঠক করতে পারেন।
ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর এ সফরের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার। এর আগে ২০১১ সালে লন্ডনে ও ২০১৪ সালের মার্চে সৌদি আরবে তাদের সাক্ষাৎ হয়। তখন লন্ডন থেকে পবিত্র ওমরাহ পালন করতে সপরিবারে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তারেক রহমান। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের মধ্য দিয়ে দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে। তাই তার এ সফর খুব গুরুত্বপূর্ণ। লন্ডন সফরকালে মিট দ্য প্রেস, প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও নাগরিক সংবর্ধনা, ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার।
পাশাপাশি বৃটেনের মূলধারার কয়েকজন রাজনীতিবিদ, বিভিন্ন সংস্থার প্রধান, বৃটিশ সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তরের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত রমজানে ওমরাহ পালনে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সৌদিতে যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও দেশে ও দলে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কায় সে সফরটি বাতিল করা হয়। এদিকে, বেগম জিয়ার লন্ডন সফর উপলক্ষে রোববার রাতে প্রস্তুতি সভা করেছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। সংগঠনের সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদের পরিচালনায় হোয়াইট চ্যাপেলস্থ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বেগম জিয়ার লন্ডন সফর সফলভাবে সম্পন্নের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।