ঢাকা, ২৯ সেপ্টেম্বর : সৌদি আরবের মিনায় পদপিষ্ট হয়ে নিহত হাজিদের মধ্যে ২২ জন বাংলাদেশের নাগরিক। গতকাল সোমবার ধর্ম সচিব চৌধুরী বাবুল হাসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। নিহতদের মধ্যে তিনজন বাদে বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি। রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই তিনজনের পরিচয় প্রকাশ করে, যদিও তাদের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেননি তার স্বজনরা। মিনা ট্র্যাজেডির পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও ঠিক কতজন বাংলাদেশি হতাহত হয়েছেন, এখনও তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, হতাহত বাংলাদেশিদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করতে আরও দু-এক দিন সময় লাগবে।
এদিকে মক্কায় অবস্থানরত হাজিরা কাটিয়ে উঠতে পারেননি মিনা ট্র্যাজেডির রেশ। এখনও তাদের মনে বিরাজ করছে ভয়, আতঙ্ক, শঙ্কা। হাহাকারে ম্লান হয়ে গেছে হজের উৎসব আমেজ। কেউ কেউ আনুষ্ঠানিকতা শেষ না করেই স্বদেশে ফিরতে শুরু করেছেন।
এখনও অজানা হতাহত বাংলাদেশি হাজিদের সংখ্যা :হজের আনুষ্ঠানিকতা অনুযায়ী মক্কার মিনা শহরে ‘শয়তানকে পাথর’ মারতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা গেছেন সাত শতাধিক হাজি। এরপর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এ ঘটনায় ঠিক কতজন বাংলাদেশি হাজি হতাহত হয়েছেন, তা নির্দিষ্টভাবে জানাতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। সরকারি হিসাবে প্রাথমিকভাবে ৯৮ জন হাজি নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে ধর্ম সচিব চৌধুরী বাবুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, হতাহত বাংলাদেশি হাজিদের পরিচয় নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। নিহতদের মধ্যে ২২ জন বাংলাদেশি নাগরিকের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
এর আগে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিহত হাজিদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় প্রকাশ করে। তাদের মধ্যে সাভারের আমিনুর রহমান নামে একজনের পরিচয় নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দেওয়া ছবিটি আমিনুর রহমানের নয় বলে নিশ্চিত করেছেন তার স্বজনরা। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ওই ব্যক্তিসহ বাকিদের পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে রোববারের পর হজ মিশন থেকে নতুন কোনো তথ্য আসেনি বলে সোমবার জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র।
তবে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, মিনায় পদদলনে নিহত আরও কিছু হাজির ছবি বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের হাতে দিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি কোনো নাগরিক রয়েছেন কি-না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
রোববার সৌদি আরব নিহতদের মধ্যে ৬৫০ জনের ছবি প্রকাশ করেছে। সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ সমকালকে জানিয়েছেন, প্রকাশিত ছবির তালিকা দেখে বাংলাদেশি হাজিদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। চিকিৎসকরাও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা প্রণয়নের কাজ করছেন। দু’একদিনের মধ্যেই হতাহত বাংলাদেশি হাজিদের নাম-পরিচয়সহ একটি তালিকা দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত।
এদিকে নিখোঁজ বাংলাদেশি হাজিদের পরিবারে বিরাজ করছে চরম উৎকণ্ঠা। তারা দ্রুততম সময়ে সরকারের কাছে নিখোঁজ স্বজনের সন্ধান চেয়েছেন। তাদের অভিযোগ, মিনার ঘটনায় নিখোঁজ হাজিদের সন্ধান দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ বা সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্তও করতে পারছে না।
মক্কায় আতঙ্ক কাটছে না :এদিকে মিনা ট্র্যাজেডির পর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হজ পালন করতে যাওয়া হাজিদের মধ্যে বিরাজ করছে শোক ও আতঙ্ক। মক্কা থেকে সোমবার সমকালের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফসিহ উদ্দীন মাহতাব জানান, প্রতিবারের মতো উৎসবের আমেজ নেই এবার হাজিদের মধ্যে। মক্কা নগরী এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি মিনা ট্র্যাজেডির রেশ। ফিকে হয়ে গেছে ঈদের আনন্দ। অধিকাংশ হাজিকে ভয়ে, আতঙ্কে হজের নিয়ম অনুযায়ী কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানেও যেতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে আসা ইউসুফ আলী আক্ষেপ করে বলেন, হজ করতে আসা এতজন হাজির মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। কীভাবে ঈদের দিন চলে গেছে টের পাইনি। দেশ থেকে ফোন করে স্বজনরা সারাক্ষণ খবর নিচ্ছেন।
এদিকে এ ঘটনার জের ধরে অব্যবস্থাপনাও তুঙ্গে উঠেছে। হাজিদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, এবার হজের সময় তীব্র যানজটের কারণে একমুখী প্রতিটি সড়কে ও টানেলে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। টানেলের ভেতরে আলো-বাতাস থাকলেও বিকট শব্দের কারণে সবার মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করে। হজ উপলক্ষে সৌদি আরবের প্রতিটি গণপরিবহন সার্ভিস ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা আদায় করেছে। যানজটের অযুহাতে অনেক চালক গন্তব্যস্থলের আগে হাজিদের জোর করে অজানা অচেনা পথে নামিয়ে দিয়েছে। ফলে পথ হারিয়ে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন অনেক হাজি।
হজ নিয়ে এবারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্ভোগের বিষয়ে অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষকেও জানানো যায়নি বলে দাবি করেছেন তারা।
এছাড়া দুটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণে অনেক বাংলাদেশি হাজি মদিনায় না গিয়ে মক্কা থেকে জেদ্দা হয়ে সরাসরি দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ফিরেছে প্রথম ফ্লাইট। আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইট।