মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান কম, ছিল সংখ্যার আধিক্য

0

বিনোদন ডেস্ক, ১ অক্টোবর : বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে একরকম যুদ্ধ ঘোষণা করেই যাত্রা শুরু হয়েছিল এবারের ঈদুল আজহার আয়োজন। অনেক ক্ষেত্রে একদমই বিজ্ঞাপন যন্ত্রণাকে পাশ কাটিয়ে, কোথাও বিজ্ঞাপনের সীমিত ব্যবহার করে দর্শকদের জন্য বিশেষ আয়োজন করেছিল।

আদতে তা কতটা ভালো হয়েছিল? তাদের ভেতর থেকে পুরনো হতাশা দূর করতে পেরেছে?

টিভি দর্শকদের একটা বড় প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। যদি সে অংশটা বিবেচনা করা হয় তবে তাতে যা পাওয়া গেছে সেটা হতাশার বাইরে কিছু নয়। সাধারণ দর্শকদের অভিমত থেকে যা পাওয়া গেছে তা দিয়ে আসলে কোনো উচ্ছ্বাস দেখানো যায় না। কয়েক বছর আগেও যেখানে ব্যতিক্রমী কিছু উপহার দেওয়ার প্রবণতা ছিল টিভি স্টেশনগুলোর মধ্যে, এখন উপহার গিয়ে ঠেকেছে অনুষ্ঠানের মধ্যে বিজ্ঞাপন ব্যবহারের ওপর। ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ঈদের অন্যতম আকর্ষণ হলেও সেটার তেমন কোনো চিহ্ন ছিল না টিভিজুড়ে। যে কয়টা অনুষ্ঠান ছিল তা মানের দিক দিয়ে খুবই নাজুক। বরং খ্যাতিমান তারকাদের সঙ্গে সংলাপ, আড্ডা দেওয়া অনুষ্ঠানগুলো ছিল উপভোগ্য। আর বিশেষভাবে এবার পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে কৃষকের ঈদ আনন্দ।

লাইভ গানের অনুষ্ঠানগুলো ছিল এবার বেশ অগোছালো। দীর্ঘক্ষণ দেখার মতো কোনো পরিবেশনা ছিল না। শুধু গাজী টিভিতে অর্ণব, পান্থ কানাইদের পরিবেশনাটা ছাড়া। ঈদে টিভি অনুষ্ঠানে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় নাটক। তাকিয়ে থাকে দর্শক। নাটকই ছিল বিজ্ঞাপনমুক্ত অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় জায়গায়। ধারণা ছিল, এবার হয়তো নাটক না দেখতে পারার হাহাকার থেকে মুক্তি পাবে দর্শক। একই সঙ্গে এটা ছিল নির্মাতাদের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে টিভি চ্যানেলগুলো হয়তো নাটকগুলো ধরে রাখবে দর্শক। কিন্তু এবারও হতাশার ব্যত্যয় ঘটেনি। অসংখ্য নাটক, লাগামহীন গল্প বলার চেষ্টা আর গল্পের ভেতর গল্প না থাকার শূন্যতা এবারও দর্শক মুখ বাঁকা করে টিভি চ্যানেল থেকে সরে গেছে। নামধারী নির্মাতাদের কাছ থেকে এবার কষ্টটা এসেছে বেশি। যাদের নাটকগুলো দেখার জন্য আলাদা সময় বের করে বসে থাকে দর্শক তারাই এবার কষ্টটা দিয়েছে বেশি।

টিভি চ্যানেলের ওপর বিজ্ঞাপন ভর না করলেও এবার সরাসরি নাটকের ওপর ভর করতে দেখা গেছে বিজ্ঞাপন ও এজেন্সিকে। কিছু নাটকে স্পষ্টতই ফুটে উঠেছে প্রোডাক্টের গল্প। কিছু গল্প একই রকম হয়েছে। সেই তুমি, আমি, থাকা না থাকা। ছিল না উপস্থাপনার নতুনত্ব। পরিচালকের নাম না বললে সব একজনের নির্মাণই মনে হবে। কিছু গল্প হয়তো করতে হবে বলেই করা হয়েছে।

তবে সবকিছুর পরও কিছু গল্প ঈদের অনুষ্ঠানের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। অভিনয়ের দিকে সেই মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরীরা ছিল শেষ ভরসা। তাহসানের অনুপস্থিতি ছিল এবার প্রকট। আফরান নিশো, মিশু সাব্বির, মারজুক রাসেল এবং জন কবীর তাদের অভিনয়ের জায়গাটা ক্রমেই শক্ত অবস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।

অভিনেত্রীদের তালিকায় নুসরাত ইমরোজ তিশাকে অতিক্রম করতে পারেননি কোনো অভিনেত্রী। অভিনয় দক্ষতা এবং চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় তিনি নিজেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী এখন। তার পাশাপাশি মিথিলা ও অপর্না ছিলেন। ছিলেন ফারিয়া শবনমও। বেশ কয়েকটি নাটকে তার প্রশংসিত অভিনয়, নতুন কোনো সু-অভিনেত্রীর পূর্বাভাস দেয়। চমক দেখাতে পারেননি নতুন কোনো নির্মাতা। আগের মতোই অনিমেষ আইচ, ওয়াহিদ আনাম, মাসুদ সেজান, আশফাক নিপুণ, ইমরাউল রাফাত, মাবরুর রশিদ বান্নাহ, মিজানুর রহমান আরিয়ান, তানিম রহমান অংশুরাই ছিলেন। তরুণ নির্মাতা ইমেল হক এবার অনেকগুলো নাটক নিয়ে চলে ছিলেন।

ছবিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল যে চরিত্র তার নাম শ্রুতি। মানে প্রথমবার চলচ্চিত্রে অভিষিক্ত অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া। মুক্তির আগেই নানা কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। নিজের প্রথম ছবিতে ‘লেটার মার্কস’ পেয়ে পাস করেছেন নুসরাত। তার ফিগার, চলনবলন, কথাবার্তা আর অভিনয় এতটাই সাবলীল ছিল যে, অভিজ্ঞ অঙ্কুশকেও তিনি ছাড়িয়ে গেছেন কখনো কখনো। একবারের জন্যও স্থূলতা কিংবা ন্যাকামি ছিল না নুসরাত ফারিয়ার অভিনয়ে।

এরপর আসা যাক ‘রাজা বাবু’ ছবির প্রসঙ্গে। ছবিটি দেখার শুরুতেই আমার সঙ্গী মন্তব্য করে বসল, ছবির নাম কি ‘রাজা বাবু’ না ‘রাবা জাবু’? নামের দুই শব্দের মাঝখানে নায়কের ছবি! বুঝতে পারছি না, নামের উচ্চারণ ওপর দিক থেকে হবে নাকি বাঁ থেকে ডান দিকে। যা হোক, নাম বিভ্রাটে না পড়ে ছবি দেখায় মনোযোগ দিলাম। ছবির পরিচালক বদিউল আলম খোকন। ঈদে মুক্তি পাওয়া শাকিব খানের একমাত্র ছবি হিসেবে ব্যবসায়িক দিক থেকে সফল এটি। কিন্তু এটিও তেলেগু ‘ধাম্মু’ ছবির নকল। বয়াপতি শ্রিনু পরিচালিত ধাম্মু ছবিতে অভিনয় করেছেন এনটিআর, ত্রিশা ক্রিশনান, কার্থিকা নায়ারসহ অনেকে। রাজাবাবু শুধু ধাম্মু ছবির নকলই নয়, ছবিটির কিছু কিছু দৃশ্য হুবহু নেওয়াও হয়েছে। বিশেষ করে শাকিব খানের পর্দায় আসার ঠিক আগমুহূর্তের একটি দৃশ্যে ধাম্মু ছবি থেকে কেটে এনে বসানো হয়েছে। ছবির মাঝামাঝিতে ওমর সানীর মৃত্যু দৃশ্যের আগে ডোবা-নালায়-গাছের ওপরের ঝুলন্ত লাশগুলোর শটটিও কেটে এনে বসানো হয়েছে।

Share.
মন্তব্য লিখুনঃ

 

',