শেয়ারবাজার ডেস্ক : অবৈধভাবে বিভিন্ন কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় হবে কাল মঙ্গলবার। এ মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর সোমবার শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক রায়ের এ তারিখ ধার্য করেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইনজীবী মাসুদ রানা খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় থাকা বিভিন্ন কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার অবৈধভাবে বিক্রির দায়ে এ মামলা দায়ের করে বিএসইসি। এ মামলার প্রধান আসামি হলেন গ্রিন বাংলা কমিউনিকেশন কোম্পানিসহ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নবীউল্লাহ নবী। তবে ২০১৩ সালের জুনে নবীউল্লাহ নবী ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে মারা যান। মামলার অন্য আসামি হচ্ছেন সাত্তারুজ্জামান শামীম। নিম্ন আদালত থেকে মামলাটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের পর বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের শুনানির পর গতকাল মামলার রায়ের দিন ঘোষণা করেন বিচারক হুমায়ুন কবির।
গতকাল মামলার আসামি সাত্তারুজ্জামান শামীমের পক্ষে তার আইনজীবী এএসএম আমিনুল হক ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি ট্রাইব্যুনালকে বলেন, সাত্তারুজ্জামান শামীম কোনো ধরনের অন্যায় কাজে জড়িত ছিলেন না। নবীউল্লাহ নবীর কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায় করতে গিয়ে মামলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নবীউল্লাহ নবীর অফিস ঘেরাও করার সময় সাত্তারুজ্জামান শামীম সেখানে উপস্থিত থাকায় তাকেও আসামি করা হয়। তার পর পাঁচ বছর ধরে তিনি হেনস্তা হচ্ছেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে তার মক্কেলের সুবিচার আশা করেন।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে শেয়ার বরাদ্দ দেয়ার নামে প্রতারণা করে টাকা উত্তোলনের অভিযোগ পায় বিএসইসি। কমিশনের অনুরোধে বিষয়টি তদন্ত করে র্যাব-৩। তদন্তকালে র্যাব-৩-এর কয়েকজন সদস্য বিনিয়োগকারী সেজে প্লেসমেন্টে প্রতারণায় দুই বিবাদী নবীউল্লাহ নবী ও সাত্তারুজ্জামান শামীমের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে নিশ্চিত হন। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই অবৈধ প্লেসমেন্ট শেয়ার ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে রামপুরার বনশ্রীতে গ্রিন বাংলা কমিউনিকেশন নামের একটি কোম্পানির অফিসে অভিযান চালিয়ে নবীউল্লাহ নবী ও সাত্তারুজ্জামান শামীমকে আটক করে রামপুরা থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। পরবর্তীতে বিএসইসির উপপরিচালক এএসএম মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে এ দুজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। বিএসইসি ও র্যাবের প্রাথমিক তদন্তে সে সময় আটককৃতদের হাতে ১৩টি কোম্পানির অবৈধ প্লেসমেন্ট শেয়ার থাকার কথা জানানো হয়।
এদিকে ১৯৯৬ সালে চিটাগং সিমেন্ট অ্যান্ড ক্লিংকার অ্যান্ড গ্রাইন্ডিং কোম্পানির (বর্তমানে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট) শেয়ার কারসাজির মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। গতকাল এ মামলার বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তবে তা শেষ না হওয়ায় সোমবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। যুক্তিতর্ক শেষ হলে মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য করতে পারেন বিচারক। এর আগে ১৪ অক্টোবর এ মামলায় বাদী ও বিবাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন শেষ হয়।
গতকাল প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম মামলার বাদীপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এর পর আসামি টি কে গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু তৈয়বের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেন ব্যারিস্টার খন্দকার মাহবুব হোসেন। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর আসামি ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান ও সাবেক পরিচালক এ এস শহীদুল হক বুলবুলের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করলেও তা শেষ করতে পারেননি। এ অবস্থায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য সোমবার দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় ২১ অক্টোবর থেকে আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য থাকলেও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের কারণে গতকাল থেকে তা শুরু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে চিটাগং সিমেন্ট ক্লিংকার অ্যান্ড গ্রাইন্ডিং কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার কারসাজি মামলার অন্যতম আসামি রকিবুর রহমান। তিনি ওই সময়ে কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন তত্কালীন পরিচালক আবু তৈয়ব ও এ এস শহিদুল হক বুলবুল।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ভারতীয় এবং ইরানি বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির শেয়ার কিনবে বলে মূল্যসংবেদনশীল তথ্য ছড়িয়ে শেয়ারমূল্য প্রভাবিত করেছেন আসামিরা। বিএসইসির অনুমতি ছাড়া কোম্পানির একজন পরিচালক বড় অঙ্কের শেয়ার হস্তান্তর করেন। এছাড়া বিএসইসির নির্দেশনা সত্ত্বেও আসামি রকিবুর রহমান এবং এ এস শহিদুল হক বুলবুল কোম্পানির পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেননি, যা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ এর লঙ্ঘন।
১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে চিটাগং সিমেন্টের শেয়ারদর ২ হাজার ৫৮৫ টাকা থেকে প্রায় ১ হাজার শতাংশ বেড়ে একই বছরের ডিসেম্বরে ১৮ হাজার ৪৮ টাকায় উন্নীত হয়। কোম্পানিটির শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে বাড়লেও স্টক এক্সচেঞ্জকে এর নেপথ্যে কোনো মূল্যসংবেদনশীল তথ্য দেয়নি কোম্পানিটি। বাজারধস শুরুর দুই মাসের মধ্যে এ শেয়ারের দর ১ হাজার ৭৩১ টাকায় নেমে আসে। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।