ঢাকা : রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ও প্রকাশ ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার দায় স্বীকার করেছে আনসার আল ইসলাম নামের একটি জঙ্গি সংগঠন। তারা নিজেদের আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস)-এর শাখা বলে দাবি করেছে।
শনিবার রাত ৯টার দিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে করা একটি টুইটে এ দায় স্বীকার করা হয়। এছাড়া ৯টা ৩৬ মিনিটে গণমাধ্যমে প্রেসবিজ্ঞপ্তিও পাঠায় সংগঠনটি। তাতে হয়- ‘আমরা আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা এ হত্যার দায় স্বীকার করছি।’
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মুরতাদ আহমেদুর রশিদ টুটুল তার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘শুদ্ধস্বর প্রকাশনী’ থেকে ২০১০ সালে কুলাঙ্গার অভিজিৎ রায় (যাকে ইতিমধ্যেই মুজাহিদিনরা কতল করেছেন) এবং ব্লগার রায়হান আবিরের (মুজাহিদিনের ভয়ে পলাতক) যৌথভাবে লিখিত ইসলামবিদ্বেষী বই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ ছাপানোর মধ্য দিয়ে সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে ছাপানোর দায়িত্ব আহমেদুর রশিদ টুটুলের ‘শুদ্ধস্বর প্রকাশনী’ থেকে নিজের কাধে নেয় ফয়সল আরেফিন দীপনের ‘জাগৃতি প্রকাশনী’। এখনো তার প্রকাশনী থেকেই বইটি ছাপানো হচ্ছে। এই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটিতে সরাসরি আল্লাহর রাসূল (সা.) এর অবমাননা করা হয়েছে। এছাড়াও ফয়সল আরেফিন দীপনের ‘জাগৃতি প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটিতে রাসূল (সা.) কে অবমাননা করা হয়েছে।”
গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় এরপর কাদের ওপর হামলা করা হবে তাদের তালিকাও দেয়া হয়েছে।
‘কে হবে আমাদের পরবর্তী টার্গেট’
এ শিরোনামে আট ধরনের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পরবর্তী সময়ে ‘টার্গেট’ হিসেবে উল্লেখ করেছে আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ। তাদের মধ্যে রয়েছে— আল্লাহ, রাসুল ও দ্বীন ইসলামকে হেয়কারী ও কটূক্তিকারী ব্যক্তি, কটূক্তিকারীদের বুদ্ধি-পরামর্শ ও অর্থ দিয়ে সাহায্যকারী ও রক্ষাকারী ব্যক্তি, ইসলামী শরীয়তের নিয়ম-কানুনে বাধা প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। কারো নাম উল্লেখ না করে তারা বলেছে, হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা; কোনো এলাকার মেয়র, মোড়ল ও মাতব্বর; কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান; কোনো বিচারক, আইনজীবী ও চিকিৎসক; কোনো গল্পকার, ঔপন্যাসিক, কবি, বুদ্ধিজীবী, কোনো পত্রিকার সাংবাদিক ও সম্পাদক; নাট্যকার, প্রযোজক ও অভিনয়শিল্পী ইত্যাদি।
যারা নিজেদের বক্তৃতা বা বিবৃতির মাধ্যমে ইসলামী শরীয়তের বিরোধিতা করছে, ইসলামী শরীয়তকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে, যারা এই মুসলিম সমাজে বিভিন্ন প্রকার নগ্নতা-বেহায়াপনার ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, যারা এদেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি-অর্থনীতিতে থেকে ইসলামী শরীয়তের ‘অবশিষ্টাংশটুকুও’ ছেটে ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত এবং যারা দ্বীন ইসলামের আলোকে নিভিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত—তাদেরও পরবর্তী টার্গেট বলে উল্লেখ করেছে আনসার আল ইসলাম।
এর আগে ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপ্যাধ্যায় (নিলয় নীল) হত্যার পরও একইভাবে দায় স্বীকার করে বার্তা পাঠিয়েছিল আল-কায়েদা ভারতীয় শাখা।
এদিকে, আনসার আল ইসলামের দায় স্বীকারের সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা মহনগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার মুনতাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম নামের একটি সংগঠন বিভিন্ন গণমাধ্যমে হামলা ও হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এছাড়া তার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু সেটিও দেখা হচ্ছে। কোথো থেকে, কে পাঠিছে তার বের করার আমাদের কারিগরি টিম কাজ শুরু করেছে।’
এর আগে শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতির কার্যালয়ে দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দীপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও চিন্তক আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে।
একই দিন দুপুরে লালমাটিয়া সি-ব্লকের ৮১৩ নম্বর বাসায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর কার্যালয়ে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলায় শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদুর রশিদ টুটুল, লেখক ও ব্লগার রণদীপম বসু ও তারেক রহিম গুরুতর আহত হয়। বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল ও ফয়সাল আরেফিন দীপন উভয়ের প্রকাশনা সংস্থা থেকেই নিহত ব্লগার অভিজিত রায়ের বই প্রকাশিত হয়েছিল। অভিজিত রায়কে গত ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে গ্রন্থমেলা চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও গুরুতর আহত হন। -আইআরআইবি