পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যানকে হত্যা

0

ঢাকা, ৬ অক্টোবর : রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মুহম্মদ খিজির খানকে নিজ বাসায় গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।  পুলিশ বলেছে, সোমবার সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের হাত পা ও মুখ বেঁধে খিজিরকে একটি কক্ষে নিয়ে দুর্বৃত্তরা গলা কেটে হত্যা করে। রাতে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।

 

 

ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বের হয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, খিজির খানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, ছয়-সাতজন ব্যক্তি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

 

 

তবে খিজির খানের গাড়ি চালক মোস্তফা ও খানকাহ শরিফের গৃহকর্মী আমেনার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় আট থেকে দশ জন বাসায় আসেন। তাঁরা গতকালও এসে বাসার নিচতলা ভাড়া নেওয়ার জন্য কথা বলেছিলেন। এ জন্য পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিমও দিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁরা প্রথমে তিন তলায় যান। সেখানে তাঁরা জানতে পারেন খিজির খান দোতলায় আছেন। পরে তাঁরা দোতলায় যান। দোতলায় মসজিদের মতো মিনার এবং অজুর ব্যবস্থা আছে। খিজির খান মিনারের সামনে বসে ছিলেন। এ সময় তাঁরা খিজির খানের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। এ সময় আমেনা অজুখানার সামনের অংশটি পরিষ্কার করছিলেন। তিনি অজুখানা থেকে বের হয়ে মিনারের সামনে এসে দেখেন ওই লোকগুলো খিজির খানকে বেঁধে ফেলেছে। তা দেখে আমেনা চিৎকার দেন। আমেনার চিৎকার শুনে খিজির খানের স্ত্রী রুবি নাতিকে নিয়ে নিচে দোতলায় নেমে আসেন।

রুবি দোতলার দরজার সামনে আসলে একজন তাঁকে সালাম দিয়ে ভেতরে ঢোকায়। এর মধ্যে দুই তিনজন তৃতীয় তলায় চলে যান। তাঁরা তৃতীয় তলায় গিয়ে ওখানে থাকা মোস্তফাসহ পরিবারের বাকি সদস্যদের বেঁধে ফেলেন। আর দোতলায় থাকা বাকি সদস্যরা খিজির খানের স্ত্রী ও গৃহকর্মীদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। এরপর তাঁরা খিজির খানকে অজুর স্থানের সামনে নিয়ে গিয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে গলা কেটে হত্যা করেন।

মোস্তফার মতে, ওই দলের দুই তিনজনের বয়স ২৫ এর মতো। বাকিদের বয়স একটু বেশি।

খিজির খানের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর গ্রামে। পদ্মা নদীর পাড়ে তাঁদের গ্রামের বাড়ি। বাবা মৃত রহমতুল্লাহ। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে খিজির খান ছিলেন তিন নম্বর। খিজির খানের দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে। বড় ছেলে মতিউর ইসলাম কম্পিউটার প্রকৌশলী। তিনি বর্তমানে পিডিবিতে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে আশরাফুল আহমেদ একটি বেসরকারি মেডিকেলের শিক্ষার্থী। দুই মেয়ে রাবেয়া খাতুন ও রাহেলা খাতুন।

খিজির খানের আত্মীয় তৌহিদুর ইসলাম ও মুরিদ নূরুস সালাম এ প্রতিবেদককে বলেন, খানকাহ শরিফে প্রত্যেক বৃহস্পতিবার জিকির ও দোয়া অনুষ্ঠিত হতো। খিজির খান নিজেই তা পরিচালনা করতেন। কাউকে তিনি দাওয়াত দিতেন না, নিজে থেকেই লোকজন সেখানে যেত। আশপাশের লোকজন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারে ৫০ থেকে ৬০ জন লোক খানকাহ শরিফে যেত।

এই ঘটনার সঙ্গে নূরুল ইসলাম ফারুকি হত্যার কোনো মিল আছে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, এ ঘটনায় আলামত সংগ্রহ করা হচ্ছে, হত্যার কারণ নির্ণয়ের চেষ্টা চলছে।

খিজির খানের ছোট ভাই ইলিয়াস হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। রাতে মুঠোফোনে তিনি এ প্রতিবেদককে কুষ্টিয়া অফিসের প্রতিবেদককে বলেন, খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন মূর্ছা যাচ্ছে। বাড়ির কয়েকজন সদস্য ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘খিজির নামাজ-কালাম ও ধর্ম নিয়ে কথা বলতেন। একটু পির বেশে থাকতেন। খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। ভাইয়ের কোনো শত্রু থাকতে পারে বলে মনে হয় না।’

ইলিয়াস হোসেন বলেন, লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে। এবং পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে। সূত্র : প্রথম আলো।

Share.
মন্তব্য লিখুনঃ

 

',