স্বাস্থ্য ডেস্ক : ডেঙ্গু আর দশটি সাধারণ অসুখের মত মশা বাহিত একটি রোগ। আতঙ্কিত না হয়ে আমরা অতি সহজেই এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।ভারতের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় ও বেলেঘাটা আইডির অধ্যাপক ডা. উচ্ছল ভদ্র বর্তমান সময়ের আতঙ্কিত রোগ ডেঙ্গু নিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের পাঠকের জন্য সে পরামর্শগুলো পত্রস্থত করা হল।
উপসর্গ:
জ্বর, গায়ে অল্প ব্যথা, গলা ব্যথা, প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা কমে গায়ে লাল লাল রাশ, চুলকানি, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, কখনও মাথার যন্ত্রণা, চোখে ব্যথা, বমি, পেটে ব্যথা হলে প্রাথমিক ভাবে আমরা সেটিকে ডেঙ্গু বলে ধরেনি। তবে এই রোগ চিহিৃত করতে এবং তার চিকিৎসার প্রয়োজনে কয়েকটি পরীক্ষা অতি জরুরি।
প্রথমেই রক্ত পরীক্ষা:
+ জ্বর, গা-হাতে ব্যথা হলেই রক্তপরীক্ষা করাতে হবে৷ তার সঙ্গে প্লেটলেট কাউণ্ট করানো খুবই জরুরি৷ যদি দেখা যায় প্লেটলেট কমে যায়নি, ব্লাড কাউণ্টও ঠিক আছে তাহলে ডেঙ্গুর চিন্তা নেই, অন্য কারণে জ্বর হয়েছে৷
ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এনএস ১ (নন স্ট্রাকচারাল ওয়ান) টেস্ট করানো হয়৷ সাধারণত জ্বর হওয়ার প্রথম দু-একদিনের মধ্যেই এনএস ১ পজিটিভ হয়ে যায়৷ এনএস ১ পজিটিভ, প্লেটলেট কমলে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷
+ জ্বর হওয়ার চারদিন পর করতে হবে ম্যাক অ্যালাইজা বা আইজিএম অ্যালাইজা টেস্ট৷ পাঁচদিনের দিন অ্যালাইজা টেস্ট করলে তবেই সঠিক রেজাল্ট বের হবে৷
যদি দেখা যায় প্লেটলেটের মাত্রার অত্যধিক পরিবর্তন হচ্ছে, রোজই অনেকটা কমে যাচ্ছে তাহলে ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি৷ এমন অবস্হায় রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে৷
চিকিৎসায় যা করতে হবে:
+ ডেঙ্গুর আলাদা কোনও ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই৷ প্যারাসিটামল, ও.আর.এস. মেশানো পানি ও রোজ দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করতে হবে৷ সঙ্গে বিশ্রাম৷
+ ডেঙ্গু জ্বর. হলে ব্যথার ওষুধ খাওয়া চলবে না৷ এতে প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যায়৷
+ ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভারের ক্ষেত্রে প্লেটলেটের সংখ্যা খুব কমে যায়৷ শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়৷ সেক্ষেত্রে রোগীকে ফ্লুইড ম্যানেজমেণ্ট করে প্লেটলেট দেওয়া অত্যন্ত জরুরি৷
+ তেল, মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া চলবে না৷ সি ও সহজে হজম করা যায় এমন খাবার রোগীকে দিতে হবে৷ অ্যাণ্টিঅক্সিডেণ্ট যুক্ত খাবার রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা বাড়ায়৷
+ ডেঙ্গুর রোগী সুস্থ হলেও সাবধানতা জরুরি৷ প্রথমবার ডেঙ্গু হলে দ্বিতীয়বার আবার যদি ডেঙ্গু হয় তখন তা ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার হয়৷ তাই সব সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে৷ বাচ্চাদের সারাক্ষণ মশারির ভিতর রাখুন৷ মশা মারার তেল ব্যবহার করুন৷
ডেঙ্গু এড়াতে:
+ ডেঙ্গুর মশা বাড়ির পরিষ্কার জমা পানিতে জন্মায় ৷ তাই বালতি, এসি, নারকেলের খোল, পুরনো টায়ারের মধ্যে পানি জমতে দেওয়া যাবে না৷ পানি জমলেই ব্লিচিং পাউডার দিন ৷ মশা মারার কয়েল বা তেল ব্যবহার করুন৷
+ দিনের বেলায় মশা কামড়ালে উপেক্ষা নয় ৷ রাত ও দুপুরে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন ৷
+ মশার উপদ্রব বেশি হলে ফুলহাতা,হালকা রঙের পোশাক পরতে হবে৷ উগ্র গন্ধযুক্ত সুগন্ধির ব্যবহার নয় ৷ এতে মশা আকর্ষিত হয়৷