ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর : পবিত্র ঈদুল আজহার মাত্র তিন দিন বাকি থাকলেও এখনও জমে ওঠেনি রাজধানীর পশুর হাটে বিকিকিনি। বৃষ্টির বাধা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর গরু-ছাগল এরই মধ্যে হাটগুলোয় জড়ো করা হলেও ক্রেতা আসছেন না তেমন। যারা আসছেন, তারা অধিকাংশই কেবল ঘুরে ঘুরে দরদাম যাচাই করে দেখছেন। ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে হাটে ক্রেতা কম। অবশ্য শুরুর দিনের চেয়ে তারা দাম হাঁকানোয় একটু নমনীয় হয়েছেন। আগামী দু-একদিনের মধ্যে হাট সরগরম হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই।
গতকাল সোমবার রাজধানীর সর্ববৃহৎ পশুর হাট গাবতলী, কাফরুলের কচুক্ষেত বাজার, আফতাবনগর, কমলাপুরসহ বেশিরভাগ হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটে হাটে গরু আর গরু। সে তুলনায় ক্রেতা অনেক কম। একদিকে বৃষ্টি, অন্যদিকে রাখার জায়গার অভাবে আগেভাগে কেউ পশু কিনছেন না রাজধানীর বাসিন্দারা। ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম বেশি হাঁকছেন বেপারীরা। গাবতলী গরুর হাটে আসা মিরপুরের কাজীপাড়া থেকে আসা ক্রেতা আরিফ জানান, বিক্রেতারা অনেক বেশি দাম হাঁকলেও সেই দামে বিক্রি করতে পারছেন না কেউই। তিনি বলেন, শেষ সময়ে দাম খানিকটা কমার আশায় আছেন অনেকে। তার মতে, আজ মঙ্গলবার থেকে গরুর দাম আরও কমে আসবে। ঈদ আসতে এখনও কয়েক দিন বাকি থাকায় যাচাই-বাছাই করেই পশু কিনবেন তারা।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এবার ছোট-বড় মিলিয়ে ২৩টি পশুর হাট বসেছে। এ বছর কোরবানির হাটে ভারতীয় গরুর আধিপত্য কাটিয়ে দেশি গরুর জয়জয়কার। ছোট, মাঝারি, বড়সহ সব ধরনের দেশি গরু বাজারজুড়ে ছড়িয়ে আছে। ভারতীয় গরু আসবে না, সেজন্য গরুর দাম বেশি হবে- এমন আশায় নিজ উদ্যোগে রাজধানীতে গরু নিয়ে এসেছেন অনেক খামারি। দেশের প্রতিটি মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিনই গরু আসছে। ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটানের গরুও দেশে ঢুকছে। গরু ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজধানীর হাটগুলোতে যে পরিমাণ গরু আসছে, তাতে সংকট তো হবেই না; বরং প্রত্যাশার তুলনায় এখনই গরু বেশি।
গাবতলী হাট: গাবতলী পশুর হাটে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতীয় গরু আসবে না, এমন আশঙ্কা থেকে সবাই মনে করেছিল, এ বছর রাজধানীতে গরুর সংকট দেখা দিতে পারে; কিন্তু গত তিন দিনে যে পরিমাণ গরু হাটে এসেছে, তা গত বছরের সমান। কুষ্টিয়া থেকে রোববার ১৬টি গরু নিয়ে গাবতলী হাটে আসা মো. হাফেজ জানান, গত বছরের চেয়ে এবার গাবতলী হাটে এখনই গরু অনেক বেশি। অথচ বৃষ্টির কারণে বেচাকেনা একেবারে কম।
কুষ্টিয়ার আরেক গরুবিক্রেতা আহম্মদ আলী বলেন, এ বছর বাজারে শুধু দেশি গরু। গতকাল এ হাটে অনেক গরু আসায় কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করা যাচ্ছে না। তাই আগের চাওয়া দাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা কমিয়ে গরু বিক্রির চেষ্টা করছেন। বেপারী ফারুক হোসেন বলেন, এই হাটে মাঝারি গরুর দাম এবার বেশি। মাঝারি গরু ৫৫ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গাবতলী পশুর হাটের হাসিলকর্মী আনোয়ার বলেন, দিন-রাত বিভিন্ন এলাকা থেকে গরুর ট্রাক আসছে; কিন্তু বৃষ্টির কারণে ক্রেতা আসছে না। গতকাল বিকেল পর্যন্ত মাত্র ৭০টি গরু বিক্রি হয়েছে।
আফতাবনগর গরুর হাট: রাজধানীর অন্য হাটের তুলনায় রামপুরার আফতাবনগর হাটে ক্রেতার আনাগোনা একটু দেখা গেল বেশি। তবে বিক্রি তেমন হচ্ছে না। কুষ্টিয়া থেকে আসা এক বিক্রেতা জানালেন, তিনি ১৫টি গরু নিয়ে এসেছেন এ হাটে তিন দিন আগে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত একটি গরু বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ক্রেতারা শুধু এসে দেখে যাচ্ছেন। কিনছেন খুব কম। আকার ভেদে ছোট গরু ২৫ থেকে ৪০ হাজার, মাঝারি গরু ৪০ থেকে ৭৫ হাজার এবং বড় গরু ৮০ হাজারের ওপর বিক্রি হচ্ছে।
হাটের শুরুতেই বসেছে ছাগলের হাট। মনসুর নামে এক বিক্রেতা টঙ্গী থেকে ৬৯টি ছাগল নিয়ে গত শনিবার এসেছেন। এ পর্যন্ত তিনি তিনটি ছাগল বিক্রি করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, এখনও ক্রেতা বেশি আসছেন না। সরকারি অফিস ছুটি হলে ছাগলের ক্রেতা বেশি আসবেন। আকার ভেদে ছোট ছাগল সাত থেকে ১০ হাজার, মাঝারি ছাগল ১০ থেকে ১৭ হাজার এবং বড় ছাগল ২০ থেকে ৮০ হাজার পর্যন্ত দাম চাওয়া হচ্ছে।
কমলাপুর গরুর হাট: ‘বৃষ্টি, কাদা আর গোবরের মধ্যে থাকতে গরুর সমস্যা হচ্ছে। ঠিকমতো না পারছে খেতে, না পারছে বসতে। এ কষ্ট সহ্য হচ্ছে না, তাই কোনোরকম একটা দাম হলেই বিক্রি করে দিব।’ আশুলিয়া থেকে আসা গরু বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলছিলেন এ কথা। গতকাল থেকে কেনা-বেচা জমজমাট হওয়ার আশা করেছিলেন তিনি; কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হওয়ার কারণে তা হয়নি।
মেহেরপুর থেকে নাজমুল হক একটি গরু নিয়ে এসেছেন এ হাটে। তিনি জানান, এক মাস আগে গরুটি ৮০ হাজার টাকায় কিনেছি। খরচসহ লাভ করতে হলে দেড় লাখ টাকা বিক্রি করতে হবে। ক্রেতারা এক লাখ ১০ হাজারের বেশি দাম বলেন না। হাটের ইজারাদার শহিদ উদ্দিন আহমেদ সেলিম বলেন, এখনও গরু আসছে। ঈদের আগের দিন রাত পর্যন্ত গরু আসবে। আশা করি, আজ থেকে হাট জমজমাট হবে।
কাফরুলের কচুক্ষেত বাজার: রাজধানীর কাফরুলের কচুক্ষেত বাজার গরুর হাটে শনিবার টাঙ্গাইলের নাগরপুর থেকে ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন টিপু মিয়া। গতকাল বিকেল পর্যন্ত তার একটি গরুও বিক্রি হয়নি। তিনি বলেন, যে দামে চার মাস আগে গরু কিনেছেন, সে দামও বলছেন না ক্রেতারা। তার কাছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দামের মাঝারি মানের গরু রয়েছে। গত বছর একই সাইজের গরু ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবার তা ৪০ হাজার টাকার বেশি বলছেন না ক্রেতারা। এ হাটের ইজারাদার রুস্তম আলী সরদার বলেন, বিকেল থেকে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। এ হাটে লাখখানেক গরু রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত শতাধিক গরু বিক্রি হয়।
পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং গরুর হাট: মিরপুর পল্লবীর ইস্টার্ন হাউজিং গরুর মাঠে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১১টি পশু বিক্রি হয়। এর মধ্যে গরু ৯টি আর ছাগল দুটি। এ হাটে গরু ৩৮ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকায় আর ছাগল আট হাজার টাকা করে বিক্রি হয়। মাঠের ইজারাদার সহকারী আজিজুল ইসলাম বলেন, গরু পর্যাপ্ত থাকলেও ক্রেতা নেই। এ মাঠে রোববার দুপুরে ১৭টি গরু নিয়ে এসেছেন কুষ্টিয়ার লোকমান মিয়া। গতকাল বিকেল পর্যন্ত তার একটি গরুও বিক্রি হয়নি। -সমকাল