ঢাকা: ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর কথা ছিল তাদের, কিন্তু সে শিক্ষকরাই না খেয়ে রাত কাটালেন রাস্তায়-ফুটপাতে। অবৈতনিক শিক্ষার খড়গে পড়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শুক্রবার থেকে এভাবেই আমরণ অনশন করছেন নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে ২৬ অক্টোবর থেকে শহীদ মিনার ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছিলেন তারা। এর শুক্রবার থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেন শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এই অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের নিম্ন মাধ্যমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা, যোগদানের তারিখ থেকে বয়স গণনা করা এবং নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি বা পাঠদান বন্ধ রাখা।
অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দিলেও আমাদের এক টাকাও বেতন দেয় না। আর অবৈতনিক শিক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও কোনো বেতন আদায় করা যায় না। ফলে আমাদের চাকরি করতে হচ্ছে বিনাটাকায়।
তিনি বলেন, অনেকেই ১০-১৫ বছর ধরে চাকরি করছেন। তাদের স্বপ্ন ছিল এমপিওভুক্ত হবেন। কিন্তু ১৫ বছর ধরেও সে অপেক্ষা শেষ হয়নি। আমাদের পরিবারের কি হবে, সেটা সরকারের ভাবা উচিত।
শিক্ষক সোহরাব হোসেন আরও বলেন, আমরা শিক্ষকতা পেশাকে ভালবেসে এ পেশায় এসেছি। কিন্তু বেতন না পাওয়ায় আমাদের অনেকেই এখন জমি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রী কেবল আমাদের আশ্বাস দিচ্ছেন, আর বলছেন টাকা পাচ্ছেন না। দেশের সব খাতের টাকা হয়, কিন্তু এ খাতের টাকা হয় না? তাহলে কি সরকার লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে পড়াতে চায় না?
নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ এশারত আলী বলেন, না খেয়ে রাস্তায়-ফুটপাতেই রাতে ঘুমিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। অনশন করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মেডিকেল টিম বসিয়ে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি শিক্ষামন্ত্রী বা সরকারের কেউ এসে আমাদের এখানে এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়ে যাবেন। অন্যথায় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
তিনি বলেন, আমাদের তো রাস্তায় থাকার কথা ছিল না। আমাদের ক্লাসরুমে পড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু সত্যিই যদি আপনারা শিক্ষিত জাতি চান, তাহলে শিক্ষকদের বেতন দিতে চাচ্ছেন না কেন? এভাবে বেতনহীন থেকে কিভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াবো?
অধ্যক্ষ এশারত আলী বলেন, সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসার প্রায় আট হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন।
অনশন কর্মসূচিতে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার কুণ্ডু, সহ-সভাপতি রাশেদুল ইসলাম তপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সালেহসহ শতাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী অংশ নেন।