ঢাকা, ২৩ সেপ্টেম্বর : লাখ লাখ হাজির চোখের পানিতে শেষ হলো হজের খুতবা। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার কিছু পরে শুরু হয়ে খুতবা শেষ হয় ১২টা ৪৪ মিনিটে। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে খুতবা প্রদান শুরু করেন গ্র্যান্ড মুফতি।
এরপর বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহতায়ালার জন্য। তাই আমি তারই প্রশংসা করছি। সেই আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মোহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও তার পক্ষ থেকে প্রেরিত পুরুষ (রাসূল)। কামনা করছি, তার প্রতি, তার পরিবার-পরিজন ও তার সাহাবিদের প্রতি কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবারিত রহমত বর্ষিত হোক।
এরপর তিনি বলেন, হে মানবমণ্ডলী! ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। ইসলামে শুধু মানবাধিকার নয়, পশুর অধিকার সম্পর্কেও বলা হয়েছে। ইসলাম সাদা-কালো, ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেনি। ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মীয় সভ্যতাই উৎকৃষ্ট। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করার কথাও বলা হয়েছে ইসলামে।
সমপ্রতি মক্কায় ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। হজের ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের দোয়া করেন। খুতবার শেষ দিকে গ্র্যান্ড মুফতি বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আসুন, সবাই মিলে পাঁচটি মৌলিক অধিকার রক্ষা করি। সেগুলো হলো- ধর্ম, সম্পদ, ইজ্জত, জীবন ও বিবেক-বুদ্ধি রক্ষার অধিকার। তিনি বলেন, গণবিধ্বংসী অস্ত্র দিয়ে নিরাপত্তা টিকিয়ে রাখা যায় না। দেশ দখল ও পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্ত দিয়ে নিরাপত্তা অটুট রাখা সম্ভব নয়। অবরোধ, অনাহার, অধিকার হরণের ফলাফল কখনোই কল্যাণকর নয়। এগুলোর ফলে শত্রুতা আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।
এর আগে লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির। সারা বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কণ্ঠে মুহুর্মুহু ধ্বনিতে আজ মুখরিত হয়ে উঠে ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দান। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে সৌদি আরবে আরবি জিলহজ মাসের ৯ তারিখ অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র হজের মূল অনুষ্ঠান। হাদিসের বিধান অনুযায়ী মঙ্গলবার মিনার তাঁবুতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় এবং রাত যাপন করেন হাজীরা। এর পর হাজীরা ফজরের নামাজ আদায় করেই আরাফাতের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তাদের সবার মুখে থাকে লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নিমাতা, লাকাওয়াল মুলক অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।
বিশ্বের প্রায় ১৯০টি দেশের ৩০ লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনের উদ্দেশে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পবিত্র মক্কা নগরী থেকে মিনার তাঁবুতে এসে নামাজ আদায়, ইবাদত-বন্দেগি ও জিকির-আজকার করেছেন। প্রতি বছরের মতো এবারও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হাজার হাজার সুদৃশ্যমান সাদা রঙের তাঁবুতে সুশৃংখলভাবে অবস্থান করেছেন হাজীরা। ফজর নামাজ শেষে কেউ পায়ে হেঁটে, আবার কেউ বিভিন্ন যানবাহনে করে হাজির হন ঐতিহাসিক আরাফাত ময়দানে। এবার বাংলাদেশ থেকেও গেছেন এক লাখ ৬ হাজার মুসল্লি।
পবিত্র মক্কা নগরী থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে হজরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.)-এর পুনর্মিলনের ঐতিহাসিক স্থান এই আরাফাত। আরাফাত ময়দানের জাবালে রহমত হচ্ছে পুনর্মিলনের স্মৃতিস্তম্ভ। যেখানে হাজীরা সমবেত হয়ে চুম্বন এবং মোনাজাত করে থাকেন। শুধু তাই নয়, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বিদায় হজের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত পুণ্যভূমি আরাফাত ময়দানের আকাশ-বাতাস ও প্রতিটি বালুকণায় প্রতিধ্বনিত হয় হাজীদের হৃদয়মথিত লাব্বাইক ধ্বনি। চারদিকে শুধুই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শানে হাজির হওয়া দুই প্রস্থ সাদা কাপড় পরা লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ।
সৌদি সরকারের বিশেষ ব্যবস্থায় এবারও উন্মুক্ত ময়দানের সব তাঁবু কেবলামুখী করে বাঁধা হয়েছে। আরাফাত ময়দানে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, হেলিকপ্টারসহ ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সার্বক্ষণিক টহল দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এবারও মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় ছোট ছোট অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালে সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গরমের প্রকোপ বেশি থাকায় বিশাল ময়দানজুড়ে শত শত শীতল পানির ফোয়ারার মাধ্যমে পানি ছিটিয়ে তাপমাত্রা ঠাণ্ডা রাখা হচ্ছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরির জন্য মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় এবার মোতায়েন করা হয়েছে এক লাখেরও বেশি সেনা ও পুলিশ সদস্য।