স্পোর্টস ডেস্ক : মুস্তাফিজকে অনুশীলনে বেশি সক্রিয় মনে হল। হিথস্ট্রিক আম্পায়ারিং পজিশনে দাঁড়িয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন কাটার-বালকের ডেলিভারি। হাথুরুসিংহ দূর থেকে নতুন এক নামে তাকে কাছে ডেকে নিলেন, ‘ফিজ, কাম হেয়ার।’ তারপর হাত নাড়িয়ে অনেকক্ষণ বসে কীসব বললেন। মুস্তাফিজ আবার মার্কে ফিরে এসে বোলিং শুরু করলেন। তামিম, লিটন, রিয়াদ, মুশফিককে দেখা গেল ভাগ-ভাগ করে বোলিং মেশিনে ব্যাটিং প্রাকটিস করতে। তৃতীয় ওয়ানডের আগে বাংলাদেশের অনুশীলনের এটাই সার্বিক চিত্র। সেই চিত্রে আত্মবিশ্বাসের তুলিতে মিশে থাকল সতর্কতার এক ছাপ- আরেকটা হোয়াইটওয়াশ যেন হাতছাড়া না হয়। র্যাংকিংয়ে সাত নম্বর স্থান যেন হেরফের না হয়।
আজ বুধবার দুপুর ১টায় মিরপুরে মুখোমুখি হবে দুই দল।
বিসিবি পাড়ায় মঙ্গলবার শোনা গেল, কামরুল ইসলাম রাব্বিকে খেলানোর কথা। নির্বাচকদের মধ্যে কেউ কেউ নাকি বলছেন, রাব্বিকে নামাতে। তবে একটি সূত্র বলছে, রাব্বিকে খেলানোর একটা আলোচনা ড্রেসিংরুমে হলেও তা বেশিদূর এগোয়নি। কেননা লিটন দাস এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের উপর ভরসা রাখতে চাইছেন থিং ট্যাঙ্কের বড় একটা অংশ। বিশেষ করে কোচ এবং অধিনায়ক। তার মানে রাব্বির অপেক্ষা দীর্ঘ হতে পারে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
বুধবারের ম্যাচটি সম্ভবত দেশের মাটিতে মাশরাফিদের শেষ ওয়ানডে। ২০১৫ আগাগোড়া দুহাত ভরে বাংলাদেশ দিয়ে গেল। পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’ করার পর দক্ষিণ আফ্রিকাকে নাকানিচুবানি; এরপর ভারতেরও একই হাল। শেষ সিরিজে জিম্বাবুয়ে কেন বাদ যাবে। টানা পঞ্চম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ যখন নিজেদের হলই, তখন আরেকটু ভালো করে হোক না!
মঙ্গলবার অনুশীলনে নামার আগে লাজুক মুস্তাফিজ কিছু বলবেন না বলবেন না করে বলে গেলেন, ‘আমরা সব সময়ই জিততে চাই।’ মুস্তাফিজের এই কথাটি আসলে নতুন বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দেয়। একটা সময় ছিল শুধুই ভাল খেলতে চাওয়া। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে একটা অসহায় মুখ বলে যেতেন, আমরা সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করব। আর এখন? বলাই বাহুল্য।
সিরিজের শুরু থেকেই দুটি বিপরীত চিত্র দুই দলে ঘোরাফেরা করছে। প্রথম দুই ম্যাচ পর চিত্রটা একটু বড় হয়েছে। শেষ পাঁচটি একদিনের ম্যাচের চারটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ে হেরেছে চারটিতে। তবু কিন্তু এল্টন চিগুম্বুরা মিরপুরে বসে লড়াইয়ের আভাস দিয়ে গেলেন, ‘কেউ হারতে ভালোবাসে না। শেষ ম্যাচে আমরা ভুল শুধরে ফিরে আসব। অন্তত শেষ ম্যাচটা জিততে চাইব।’
জিততে হলে বাংলাদেশকে আরেকটু ভাবতে হবে ব্যাটিং নিয়ে। বোলাররা প্রত্যাশা পূরণ করলেও ব্যাটসম্যানরা ধারাবাহিক ব্যর্থ। কেউ একজন হাল ধরছেন- এটাই সুখবর। প্রথম ম্যাচে মুশফিক, সাব্বির বাদে অন্যরা আবডালে ছিলেন। অবস্থা এমনই মুশফিক শতক পাওয়ার পরও স্কোর তিনশ পার হলো না। দ্বিতীয় ম্যাচে তো অবস্থা আরো নাজুক। ইমরুলকে বসিয়ে দিলে কী হতো তা কে জানে! সেই তুলনায় অতিথি বোলারদের পাশ নম্বর দিতেই হবে।
শেষ এই ম্যাচে পাশ নম্বর পেতে অনেকটা চিন্তায় থাকবেন লিটন-রিয়াদ। বিশ্বকাপের পর রিয়াদ নিজের ছায়া হয়ে আছেন। লিটনের অবস্থা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একদম নিষ্প্রভ। আটটি একদিনের ম্যাচে অর্ধশতকের দেখা পাননি। সর্বোচ্চ ৩৬। তবু মাশরাফি তার ওপর আস্থা রাখার কথা বলেছেন।
লিটন কি পারবেন মাশরাফির আস্থা টিকিয়ে রাখতে?
এমন এক ম্যাচেই বিশ্রাম নেওয়ার জোরালো সম্ভাবনা ছিল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার। শরীরটা যে এখনও তার ডেঙ্গুর প্রভাব ছাপিয়ে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। শুধুই মনের জোরে খেলে যাচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে, ডেপুটি সাকিব আল হাসান প্রথম সন্তানের মুখ দেখতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ায় অধিনায়ক মাশরাফি বিশ্রাম নিচ্ছেন না। আজও মনের জোরেই মাঠে নামবেন তিনি! এ ছাড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। তৃতীয় ম্যাচের জন্য ঘোষিত স্কোয়াড যেমন অপরিবর্তিত, তেমনি একাদশটাও অপরিবর্তিত রাখার সম্ভাবনাই বেশি। রানে না থাকলেও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও লিটন দাসের ওপরই ভরসা বেশি টিম ম্যানেজমেন্টের। বিজয়ী একাদশ কেই-বা ভাঙতে চায়!
অধিনায়ক মাশরাফির জন্য এ ম্যাচটা অন্য এক কারণেও বিশেষ ম্যাচ। গত বছর এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই যে শুরু হয়েছিল তার নেতৃত্বের দ্বিতীয় অধ্যায়। জয়, জয়, জয়, জয়, জয় আর হোয়াইটওয়াশ দিয়েই শুরু হয়েছিল সে পথটা। জিম্বাবুয়েতে শুরু করা সে বৃত্তটা জিম্বাবুয়েতেই পূর্ণ হোক না!